গোপী কৃষ্ণ (Gopi Krishna) একজন ভারতীয় কথক নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা এবং কোরিওগ্রাফার ছিলেন। তিনি ভরতনাট্যমও অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৯৫২ সালে, সতেরো বছর বয়সে, গোপী কৃষ্ণ হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ কোরিওগ্রাফারদের একজন হয়ে ওঠেন যখন তাকে কোরিওগ্রাফ নাচের জন্য নিয়োগ করা হয়।

গোপী কৃষ্ণ কথক নৃত্যশিল্পীদের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতামহ পণ্ডিত সুখদেব মহারাজ ছিলেন কত্থকের শিক্ষক এবং তাঁর খালা সিতারা দেবী ছিলেন একজন কত্থক নৃত্যশিল্পী যিনি সারা বিশ্বে অভিনয় করেছেন। যখন তিনি ১১ বছর বয়সে, গোপী কৃষ্ণ তার দাদার অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। শম্ভু মহারাজের কাছ থেকেও শিখেছিলেন। কথক ছাড়াও, গোপী কৃষ্ণ মহালিঙ্গম পিল্লাই এবং গোবিন্দ রাজ পিল্লাইয়ের কাছ থেকে ভরতনাট্যম শিখেছিলেন। দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার নৃত্যের ভাণ্ডার প্রসারিত করতে থাকেন,১৫ বছর বয়সে অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে "নটরাজ" (নর্তকদের রাজা) উপাধি লাভ করেন।

১৯৫৫ সালে, তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র ঝনক ঝনক পায়েল বাজে-এ হাজির হন। ছবিতে তিনি গির্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, একজন প্রতিভাবান তরুণ নৃত্যশিল্পী যার সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা তার নাচের ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। চলচ্চিত্রটি মূলত নাইন সো নাইন নাহি মিলাও-এর মতো গানের কারণে সফল হয়েছিল এবং শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রতি জনসাধারণের আগ্রহকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছিল। এছাড়াও তিনি গ্রহস্তি (১৯৬৩), দাস্তান, মেহবুবা, উমরাও জান, নাচে ময়ূরী (১৯৮৬) এবং দ্য পারফেক্ট মার্ডারের মতো অনেক চলচ্চিত্রের কোরিওগ্রাফ করেছেন। ১৯৬০ এবং ৭০ এর দশকে, তিনি সুনীল দত্তের অজন্তা আর্টস কালচারাল ট্রুপের সাথে সৈন্যদের বিনোদন দিয়ে ভারতের সীমান্ত চৌকিতে ভ্রমণ করেছিলেন। গোপী কৃষ্ণ পরে খার মুম্বাইতে নাটেশ্বর ভবন নৃত্য একাডেমি এবং নাটেশ্বর নৃত্য কলা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রদান করে। তিনি ৯ ঘন্টা ২০ মিনিটে দীর্ঘতম একটানা কত্থক নৃত্যের জন্য একটি বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেন। এছাড়াও তিনি বি আর চোপড়ার চলচ্চিত্র হুমরাজের 'না মুন ছুপাকে জিয়ো' এবং অসিত সেনের চলচ্চিত্র অন্নদাতার জন্য 'চম্পাবতী তু আজা'-এ মাস্টার নৃত্যশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন। দুইবারই তিনি তার বহু চলচ্চিত্রের নৃত্য সঙ্গী মধুমতির সাথে পারফর্ম করেছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে ঋষি কাপুর এবং রাজেশ খান্না অভিনীত জামানা-এ লাট্টুরাম, গুরুজির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তিনি কিংবদন্তি টিভি সিরিজ মহাভারত-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

গোপী কৃষ্ণ কত্থকের বেনারস ঘরানা শৈলীর একজন প্রবক্তা ছিলেন। তিনি তার নৃত্যে কথাকলি এবং ভরতনাট্যমের অনেক উপাদান যুক্ত করেছিলেন।

গোপী কৃষ্ণ কত্থক নৃত্যশিল্পী সাবিত্রীকে ১৯৬৪ সালে বিয়ে করেন। তাঁর দত্তক কন্যা শম্পা সোনথালিয়া ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন কোরিওগ্রাফার এবং নৃত্যশিল্পী হয়েছিলেন, ঝলক দিখলা জা-এর ৫ তম এবং ৭ তম সিজনে তিনি যথাক্রমে অভিনেতা গুরমিত চৌধুরী এবং আশিস শর্মার সাথে জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন।