photo

Chanchal Chowdhury

Bangladeshi actor
Date of Birth : 01 Jun, 1974
Place of Birth : Pabna
Profession : Actor
Nationality : Bangladeshi
Social Profiles :
Facebook
Instagram
চঞ্চল চৌধুরী (জন্ম: ১ জুন ১৯৭৪) একজন বাংলাদেশি অভিনেতা, মডেল, শিক্ষক ও গায়ক। তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র দুই মাধ্যমেই অভিনয় করে থাকেন। তিনি তার অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এবং সেরা অভিনেতা বিভাগে একটি মেরিল-প্রথম আলো দর্শক জরিপ পুরস্কার ও দুটি সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি মোট বারোটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী চঞ্চল চৌধুরী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো, অভিনয়, গান, ছবি আঁকা এসব কিছুতেই সমান পারদর্শী। তিনি কোডা, সোডা ও ইউডা কলেজের চারুকলার প্রভাষকও। চঞ্চলের অভিনয় জীবন শুরু হয় চারুকলার ছাত্র থাকাকালীন আরণ্যক নাট্যদলের সাথে যুক্ত হয়ে। পরবর্তীতে অসংখ্য নাটক ও টিভি সিরিজে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন চঞ্চল। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র রূপকথার গল্প (২০০৬)। এছাড়া তিনি মনপুরা (২০০৯), টেলিভিশন (২০১৩), আয়নাবাজি (২০১৬), ও দেবী (২০১৮) চলচ্চিত্রে তার অভিনয়নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেছেন।

প্রারম্ভিক ও শিক্ষাজীবন
চঞ্চল চৌধুরী বাংলাদেশের পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রাধা গোবিন্দ চৌধুরী এবং মায়ের নাম নমিতা চৌধুরী। তিনি গ্ৰামের স্কুল কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই তার গানবাজনা, আবৃত্তি আর নাটকের প্রতি নেশা ছিল। পরে তার মঞ্চ নাটকের প্রতি একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

অভিনয় জীবন
১৯৯৬-২০০৫: মঞ্চ ও টিভিতে অভিনয়
১৯৯৬ সালে মামুনুর রশীদের আরণ্যক নাট্যদলের সাথে কাজ করার মধ্য দিয়েই অভিনয় জীবনের শুরু হয়। তার অভিনীত প্রথম নাটক আরণ্যক নাট্যদলের কালো দৈত্য'। পরবর্তীতে এই নাট্যদলের সাথে সংক্রান্তি, রাঢ়াঙ, শত্রুগণ সহ আরও অনেক নাটকে কাজ করেন।

ফরিদুর রহমানের "গ্রাস" নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশন নাটকে কাজ শুরু করেন। তিনি মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর তাল পাতার সেপাই নাটক দিয়ে দর্শকের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তারপর থেকেই তিনি মঞ্চের পাশাপাশি বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন টিভি নাটকে।

২০০৬-২০১০: চলচ্চিত্রে অভিষেক ও প্রশংসাপ্রাপ্তি
চঞ্চলের বড়পর্দায় অভিষেক হয় ২০০৬ সালে তৌকির আহমেদ পরিচালিত রূপকথার গল্প দিয়ে। তিনি ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত মনপুরা ছবিতে সোনাই চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ৩৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ফেরদৌসের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১১তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সেরা অভিনেতা হিসেবে দর্শক জরিপ পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর গৌতম ঘোষ পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার মনের মানুষ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস মনের মানুষ অবলম্বনে লালন শাহের জীবনী নিয়ে নির্মিত।

২০১১-২০১৫: টিভি নাটকে সাফল্য
২০১১ সালে চঞ্চল চৌধুরী
২০১১ সাল থেকে তিনি আরটিভির অলসপুর ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন। মামুন অর রশিদের রচনা ও আল হাজেনের পরিচালনায় ধারাবাহিকটি ১২ই মে থেকে প্রচারিত হয়। এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দুবার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া তিনি এই কাজের জন্য ২০১৩ সালে ধারাবাহিক নাটকে শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে বিভাগে আরটিভি আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

২০১২ সালে নভেম্বর মাস থেকে চ্যানেল নাইনের ইডিয়ট ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন। এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এই বছরের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক পিতা চলচ্চিত্রে ইমন সাহার সঙ্গীতায়োজনে তিনি শাওনের সাথে "তোর ভিতরে আমি থাকি" গানে কণ্ঠ দেন।

২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর ঈদুল আযহায় প্রচারিত হয় তার অভিনীত টিভি নাটক ঈদের নাটক। রুম্মান রশীদ খান রচিত ও রিপন মিয়ার পরিচালিত নাটকটিতে তাকে একজন নাট্য পরিচালক হিসেবে দেখা যায়, যিনি রওনক হাসান অভিনীত চরিত্রের অনুরোধে ঈদের জন্য একটি নাটক পরিচালনা করেন। ২০১৪ সালে ভালোবাসা দিবসে এনটিভিতে প্রচারিত মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের লাল খাম বনাম নীল খাম টেলিভিশন নাটকে তাকে দেখা যায়। এই নাটকটিতে অভিনয় করে তিনি ২০১৫ সালে সমালোচকদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। সমালোচক শাখায় এটি তার প্রথম মনোনয়ন। ২০১৫ সালে তিনি বৃন্দাবন দাস রচিত এবং সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ছয় পর্বের মিনি ধারাবাহিক ওয়াইফ মানে স্ত্রী-এ অভিনয় করেন। নাটকটি ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাভিশনে প্রচারিত হয়।

২০১৬-বর্তমান: আয়নাবাজি ও অন্যান্য
২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাভিশনে প্রচারিত টিভি ধারাবাহিক সব পাখি ঘরে ফিরে-এ তিনি শাহনাজ খুশীর বিপরীতে অভিনয় করেন। এই বছর ঈদুল ফিতরে ছয়টি ছয় পর্বের মিনি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন, সেগুলো হল বৃন্দাবন দাসের রচনা ও সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় ইতি মির্জাফর ও লাভ মানে ভালোবাসা, মাহফুজ আহমেদের পরিচালনায় ইজম আনলিমিটেড, অনিমেষ আইচের পরিচালনায় অশ্বডিম্ব, মাসুদ সেজানের পরিচালনায় ওয়াও ফ্যান্টাসি ও চন্দন চৌধুরীর পরিচালনায় চাল্লু মামার চাল্লু ভাগ্নে। এছাড়া তিনি ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে খণ্ড নাটক সবজান্তা ভালোবাসা-এ অভিনয় করেন। মানি ইজ প্রবলেম  একই বছর ঈদুল আযহায় চ্যানেল আইয়ের একজন জাদুকর নাটকে অভিনয় করেন। এতে তিনি চার বছর পর সারিকা সাবরিনের বিপরীতে কাজ করেন। এছাড়া এই ঈদে তাকে আরটিভির ছয় পর্বের ধারাবাহিক মানি ইজ প্রবলেম-এ নুসরাত ইমরোজ তিশার বিপরীতে দেখা যায়।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চঞ্চলকে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত আয়নাবাজি চলচ্চিত্রে দেখা যায়। এই ছবিতে তিনি নাম চরিত্র আয়নাসহ ছয়টি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন, এছাড়া সমালোচকদের জরিপে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস দেবী অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করেন। সরকারি অনুদান ও জয়া আহসান প্রযোজিত চলচ্চিত্রটি অক্টোবর মাসে মুক্তি পেয়েছিল। এই বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা দুই বছরের জন্য মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিমিটেডের শুভেচ্ছাদূত হন এবং আটটি বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।