photo

Bir Protik Akbar Hossain

Bangladesh Nationalist Party
Date of Birth : 18 Jan, 1941
Date of Death : 26 Jun, 2006
Place of Birth : Comilla District
Profession : Bangladesh Nationalist Party
Nationality : Bangladeshi
মো. আকবর হোসেন (১৮ জানুয়ারি ১৯৪১ - ২৬ জুন ২০০৬) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের তিনবারের মন্ত্রী। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মো. আকবর হোসেনের পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত নানুয়ারদিঘির পাড়ে। তার বাবার নাম হোসেন আলী এবং মায়ের নাম সালেহা হোসেন। তার স্ত্রীর নাম সুলতানা আকবর। তাদের এক মেয়ে, চার ছেলে।

কর্মজীবন
আকবর হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন। বৃহত্তর সিলেট জেলার টেংরাটিলা, সালুটিকরসহ বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
মুক্তিবাহিনীর দুটি দল একযোগে আক্রমণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছাতকের প্রতিরক্ষা অবস্থানে। শুরু হয়ে যায় তুমুল যুদ্ধ। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের (ব্রাভো) নেতৃত্বে ছিলেন আকবর হোসেন। অপরটি আলফা দল। আগের দিন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে রাতে দুই দলের মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে আসেন। সুরমা নদীর তীরে ছাতক। সীমান্ত থেকে ১১-১২ মাইল দূরে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছাতকে শক্ত ঘাঁটি করে। প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল প্রায় এক ব্যাটালিয়ন শক্তির জনবল। ছাতক যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধকৌশল অনুযায়ী আলফা দলের মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রবর্তী দল হিসেবে আক্রমণ পরিচালনা করে। ব্রাভো দল তাদের পেছনে থাকে। ১৪ অক্টোবর দুপুরে দুই দল একযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের আরআরের (রিকোয়েললেস রাইফেল) গোলায় পাকিস্তানিদের অনেক বাংকার ধ্বংস হয়ে যায়। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানিরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ব্রাভো দলের মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যকর সহায়তায় আলফা দলের মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার আগেই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ সময় আকবর হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত অগ্রবর্তী দলের পূর্বের অবস্থানে গিয়ে অবস্থান নেন। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকে। দুই দলের মুক্তিযোদ্ধারাই সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পরদিন (১৫ অক্টোবর) পাকিস্তানি তিনটি হেলিকপ্টার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করে। এতে আকবর হোসেন ও তার সহযোদ্ধারা এবং অপর দলের মুক্তিযোদ্ধারা বিচলিত বা মনোবলও হারাননি। সারা দিন যুদ্ধ চলে। ১৬ অক্টোবর সকাল থেকে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যেই গোটা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকা তাদের দখলে চলে আসে। পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার পরেই হঠাৎ যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ত্তের বাইরে যেতে থাকে। সিলেট থেকে ছাতকে আক্রান্ত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সাহায্য (রিইনফোর্সমেন্ট) চলে আসে। তারা দোয়ারাবাজার বেড়িবাঁধ দিয়ে ছাতকে অগ্রসর হয়। নতুন এই পাকিস্তানি সেনারা পেছনের উঁচু টিলাগুলোতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। নতুন পাকিস্তানি সেনাদের আগমন ছিল অভাবিত। কারণ, পেছনে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি কাটঅফ পার্টি। তাদের ওপর দায়িত্ব ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রিইনফোর্সমেন্ট প্রতিহত করা। কিন্তু ওই দল দুটি নানা কারণে সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। সেটা আরেক কাহিনি। তিন দিন স্থায়ী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ছাতকে প্রায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ছাতক থেকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী; দুই পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে তুলনামূলকভাবে পাকিস্তানিদের ক্ষতিই ছিল বেশি।

রাজনৈতিক জীবন
তিনি ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) গঠন করেন ও সেই দলের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করলে তিনি তার দল নিয়ে ফ্রন্টে যোগ দেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পর্যায়ক্রমে বিশেষ সচিব, যুগ্ম সম্পাদক এবং মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কুমিল্লা জেলা বিএনপির আহবায়ক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।

আকবর হোসেন ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন। এই সময় জাপানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। তিন বিঘা করিডোর, ফারাক্কা ও চাকমা সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে গঠিত কমিটির তিনি সদস্য ছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

তিনি মোট পাঁচবার ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি), ১৯৯৬ (জুন) ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সংসদ নির্বাচিত হন।

মৃত্যু
২০০৬ সালের ২৫ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Quotes

Total 0 Quotes
Quotes not found.