photo

Abul Maal Abdul Muhith

Economist and former Minister of Finance of Bangladesh
Date of Birth : 25 January, 1934
Date of Death : 30 April, 2022 (Aged 88)
Place of Birth : Sylhet, Bangladesh
Profession : Politician
Nationality : Bangladeshi
আবুল মাল আবদুল মুহিত (Abul Maal Abdul Muhith) ছিলেন একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক এবং ভাষাসৈনিক। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জন্ম ও বংশ

মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ উকিল মিয়া ছিলেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সিলেট শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সিলেট গণভোট ও পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ছিলেন বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী এবং সুফী কবি সৈয়দ আশহর আলী চৌধুরীর নাতনী। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় ছিলেন। তাঁর দাদা খান বাহাদুর আব্দুর রহীম ছিলেন রায়নগরের মুন্সী আব্দুল কাদের ও মতি বিবি বিনতে মুহম্মদ উজায়েরের ছেলে। তাঁদের আদিবাড়ি ছিল দর্জিপাড়ায়, পরে সোনারপাড়া থেকে মোখতার খাঁন কিরমানী মহল্লায় চলে যান। তাঁর দাদী হাফিজা বানু ছিলেন পাঠানটুলার আব্দুল কাদেরের মেয়ে, মৌলভী আব্দুল করীমের ভাতিজি এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামীদের বোন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মুহিতের ছোট ভাই, এবং জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাঁতুন তাঁর বোন।

শিক্ষা জীবন

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐ বিষয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়ে কৃতকার্য হন এবং একই বিষয়ে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বিদেশে চাকরিরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। অতঃপর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্মজীবন

পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। চাকরিরত অবস্থায় পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব ছিলেন। ঐ সময় তিনি পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন ও পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসে পেশ করেন।

পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত।

বাংলাদেশ থেকে এসকাপের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে দায়িত্বপালন করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ

ওয়াশিংটনে তৎকালীন পাকিস্তানের দূতাবাসে প্রথম কূটনীতিবিদ হিসেবে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে নিজ অবস্থান তুলে ধরে চাকরি থেকে ইস্তফা প্রদান করেন মুহিত।

পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকনমিক কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালেন করেন তিনি।

সরকারী চাকরি থেকে অবসরগ্রহণ

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। এরপর তিনি ফোর্ড ফাউণ্ডেশনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বা ইফাদেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

১৯৮২-১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন মুহিত। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ, আইডিবি এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে

আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। ঐ নির্বাচনে তিনি 'সংসদ সদস্য' হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা ১০ বছর তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

বৈবাহিক সূত্রে তার স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের সংসারে দুই পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে। সামিয়া মুহিত একজন ব্যাংকার এবং মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। তাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহেদ মুহিত একজন স্থপতি এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত একজন শিক্ষক।

তিনি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ 'স্মৃতি অম্লান ১৯৭১'-সহ এ পর্যন্ত তিনি ২১টি পুস্তক রচনা করেছেন। পুস্তকগুলোর বিষয়বস্তু মূলতঃ প্রশাসন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কীয়।

লেখালেখি

তিনি বহু গ্রন্থের লেখক। তার লেখা কিছু হল:

  • স্মৃতিময় কর্মজীবন
  • বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনা
  • বাংলাদেশের অভ্যুদয়
  • স্মৃতি অম্লান ১৯৭১
  • বাংলাদেশ : জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব
  • মহাপুরুষদের কথা কাছে থেকে দেখা
  • নানা দেশ নানা জাতি
  • স্মৃতির মণিকোঠায়
  • আমার সিলেট
  • মুক্তিযুদ্ধের রচনাসমগ্র
  • বসবাসের উপযুক্ত বাংলাদেশ চাই
  • সংকট ও সুযোগ
  • আমাদের জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন
  • নির্বাচন ও প্রশাসন
  • আমাদের বিপন্ন পরিবেশ
  • সোনালি দিনগুলি
  • তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাতাশ মাস
  • রাজনৈতিক ঐকমত্যের সন্ধানে
  • বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

সম্মাননা

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মুহিতকে তমঘা ই খিদমত পদকে ভূষিত করে। ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল মুহিত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো হিসেবে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তোলেন। বাপা'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। পরিকল্পনাবিহীন অবস্থায় নগরায়ণ বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষা করা, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরকরণ, বিনোদন পার্ক সৃষ্টিতে তার ভূমিকা রয়েছে। ২০১৫ সালের ১৬ জুন সিলেট জেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি তার নামে নামকরণ করা হয়।

মৃত্যু

২০২১ সালে জুলাইয়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তিনি দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন এবং পরিশেষে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।

Quotes

Total 7 Quotes
ভারতকে ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি নয়, একটা কিছু নিবো - আবুল মাল আব্দুল মুহিত
একদিন বাজারে না গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে - আবুল মাল আব্দুল মুহিত
বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্দ করা উচিত - আবুল মাল আব্দুল মুহিত
শেয়ার মার্কেটে কোন ইনভেস্টর নাই, সব জুয়াড়ি - আবুল মাল আব্দুল মুহিত
সপ্তাহে একদিন কম বাজারে যাবেন - আবুল মাল আব্দুল মুহিত
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে লুটপাট হয়েছে, সেটা শুধু পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি। - আবুল মাল আব্দুল মুহিত
গ্যাসটা এত মূল্যবান সম্পদ যে এটা দিয়ে ভাত-তরকারি রান্নার কোনো মানে হয় না - আবুল মাল আব্দুল মুহিত