যোহরের নামাজ কয় রাকাত

যোহরের নামাজ কয় রাকাত
Admin November 09, 2024 62
যোহরের নামাজ কয় রাকাত, যোহরের নামাজের নিয়ত, যোহরের নামাজের শেষ সময় এবং যোহরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আজকের এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন। আরও জানতে পারবেন যোহরের নামাজের ফজিলত, যোহর নামাজের গুরুত্ব এবং যোহর নামাজ সম্পর্কিত সহীহ হাদিসসমূহ। এই পোস্টে যোহরের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে যোহর নামাজ অন্যতম। ফজরের নামাজের পরে আসে যোহরের নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া যেমন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ, তেমনি নামাজের নিয়ম-কানুন জানাও ফরজ। দুপুরে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়লেই যোহর নামাজের সময় শুরু হয়, অর্থাৎ সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিম আকাশের দিকে হেলে পড়লে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়।

যোহরের নামাজ কত রাকাত?

যোহরের নামাজ মোট ১২ রাকাত। প্রথমে ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, তারপর ৪ রাকাত ফরজ, আবার ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং ২ রাকাত নফল।


যোহর নামাজের ফজিলত

হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও যোহরের পর চার রাকাত নিয়মিত পড়ে আল্লাহ তাআলা তাকে দোযখের আগুনের উপর হারাম করে দেন। (নাসায়ী)

ফায়দা: যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং যোহরের পর চার রাকাতের মধ্যে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ও দুই রাকাত নফল।

আবু মুসলিম (রহঃ) বলেন, আমি হযরত আবু উমামা (রাঃ)-এর খেদমতে হাজির হলাম। তিনি মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। আমি আরজ করলাম যে, আমার নিকট এক ব্যক্তি আপনার পক্ষ হতে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, আপনি নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট হতে এই ইরশাদ শুনেছেন, যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে অতঃপর ফরজ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তার ঐ দিনের ঐ সমস্ত গুনাহ যা চলাফেরার দ্বারা হয়েছে, যা হাতের দ্বারা করেছে, যা কানের দ্বারা হয়েছে, যা চক্ষু দ্বারা করেছে এবং ঐ সমস্ত গুনাহ যেগুলির খেয়াল তার অন্তরে পয়দা হয়েছে সবই মাফ করে দেন? হযরত আবু উমামা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি এই কথা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট হতে কয়েকবার শুনেছি। (তারগীব: আহমদ)

হযরত উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে কোনো মুমিন বান্দা যোহরের পর চার রাকাত পড়লে, ইনশাআল্লাহ জাহান্নামের আগুন তাকে কখনো স্পর্শ করবে না। (নাসায়ী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর যোহরের পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। তিনি এরশাদ করেছেন, এটা এমন সময় যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এইজন্য আমি চাই যে, এই সময় আমার কোনো নেক আমল আসমানের দিকে যাক। (তিরমিযী)

ফায়দা: যোহরের পূর্বে চার রাকাতের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। কোনো কোনো ওলামায়ে কেরামের নিকট সূর্য ঢলার পর চার রাকাত যোহরের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ব্যতীত ভিন্ন নামাজ।

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই এরশাদ করতে শুনেছি যে, সূর্য ঢলার পর যোহরের পূর্বে চার রাকাত তাহাজ্জুদের চার রাকাতের সমতুল্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেছেন, এই সময় সমস্ত জিনিস আল্লাহ তায়ালার তসবিহ পাঠ করে। অতঃপর কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করেছেন, যার অর্থ এই যে, ছায়াযুক্ত জিনিসগুলো ও তাদের ছায়া (সূর্য ঢলার সময়) বিনয়ের সাথে আল্লাহ তায়ালাকে সেজদা করত; কখনো একদিকে কখনো অপরদিকে ঝুঁকে পড়ে। (তিরমিযী)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার এরশাদ করলেন, বলো দেখি, যদি কোনো ব্যক্তির দরজার সামনে একটা নদী প্রবাহিত হতে থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কি কোনো ময়লা বাকি থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আরজ করলেন, কিছুই বাকি থাকবে না। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অবস্থাও এরূপ যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু উহার বদৌলতে গুনাহগুলো মিটিয়ে দেন। (তারগীব: বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

হযরত উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি যোহরের পূর্বে চার রাকাত ও যোহরের পর চার রাকাত নিয়মিত পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দোজখের আগুনের উপর হারাম করে দেন। (নাসায়ী)

ফায়দা: যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং যোহরের পর চার রাকাতের মধ্যে দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ও দুই রাকাত নফল।

যোহরের নামাজের নিয়ম

বাকি চার ওয়াক্ত নামাজ যেভাবে পড়া হয়, যোহরের নামাজও সেভাবে পড়তে হয়। যোহর নামাজের জন্য নতুন কোনো নিয়ম নেই। প্রথম চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার জন্য প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে হবে এবং চার রাকাত ফরজ নামাজের জন্য প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়তে হবে এবং ফরজের বাকি দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। অর্থাৎ সকল ফরজ নামাজে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়তে হয়, কিন্তু বাকি রাকাতগুলোতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়তে হয়। বাকি দুই রাকাত সুন্নাত ও নফল অন্য সকল দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজের মতোই। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


যোহরের নামাজের নিয়ত

নামাজের ভেতরে ও বাহিরে ১৩টি ফরজ রয়েছে। উক্ত তেরো ফরজের মধ্যে একটি ফরজ হলো নিয়ত করা। নিয়ত অর্থ ইরাদা করা বা ইচ্ছা করা। আরবিতে নিয়ত করা ফরজ না। “আমি যোহর নামাজ পড়ছি” মনে মনে এই নিয়ত করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। আত্মতৃপ্তির জন্য আরবিতে নিয়ত করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আরবিতে নিয়ত করাকে ফরজ বা সুন্নত মনে করা যাবে না। আরবিতে নিয়ত করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই বাংলাতেই নিয়ত করা ভালো। বাংলাতে এভাবে যোহরের নামাজের নিয়ত করবেন, “আমি কেবলামুখী হয়ে যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ছি, আল্লাহু আকবার।” দুই রাকাত সুন্নাত হলে চার রাকাতের স্থলে দুই রাকাত বলতে হবে এবং ফরজ হলে সুন্নাতের স্থলে ফরজ বলতে হবে।


যোহরের নামাজের প্রথম চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়ার নিয়ম

  • প্রথমে ওযু করে পাক-পবিত্র হয়ে, পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে নিয়ত করবেন যে, “আমি কেবলামুখী হয়ে যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করছি।”
  • তারপর দুই হাত কানের লতি বরাবর (মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে) উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে নাভির নিচে (মেয়েরা বুকের উপর) হাত বাঁধবেন এবং বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবেন।
  • এবার সানা পড়তে হবে (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নেই।’)

  • তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
  • সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোনো একটি সূরা পাঠ করতে হবে।
  • তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবিহ পড়বে, “সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম” তিনবার, পাঁচবার, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বিজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।
  • রুকু হতে উঠার সময় পড়বে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়বে “রব্বানা লাকাল হামদ”।
  • দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবিহ পড়বে “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” তিন, পাঁচ অথবা সাতবার।
  • এক সিজদা দেওয়ার পর সোজা হয়ে বসতে হবে (দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব। সোজা না হয়ে দ্বিতীয় সিজদায় গেলে ওয়াজিব বাদ পড়বে এবং সু-সিজদা না দিলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে)। সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আলা” পড়তে হবে।
  • এবার আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
  • এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর তার সাথে আরেকটি সূরা পড়তে হবে (প্রথম রাকাতের ন্যায় ছানা পড়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম রাকাতেই শুধু ছানা পড়তে হয়, অন্য রাকাতগুলোতে ছানা পড়তে হয় না)। এখন আগের নিয়মে রুকু ও সিজদার নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। দুই সিজদা করার পর বসতে হবে এবং তাশাহুদ পড়তে হবে।

তাশাহুদ আরবিতে:

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ
وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ -

তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ:

আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়িবাত। আসসালামু আলাইকা আয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।


তাশাহুদের বাংলা অর্থ:

সমস্ত মৌখিক ইবাদত, সমস্ত শারীরিক ইবাদত এবং সমস্ত পবিত্র বিষয় আল্লাহ তা'আলার জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি ও তাঁর বরকতসমূহ বর্ষিত হোক। আমাদের প্রতি ও আল্লাহ তা'আলার নেক বান্দাদের প্রতি তাঁর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কোন মা'বুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।


  • তাশাহুদ শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং সূরা ফাতিহা পড়তে হবে এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। তারপর রুকু-সিজদার নিয়মগুলো আগের মতো করতে হবে এবং দুই সিজদার পর আল্লাহু আকবার বলে চতুর্থ রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
  • চতুর্থ রাকাত শুরু হলো। এখন আবার সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য একটি সূরা পড়তে হবে এবং আগের নিয়মে রুকু করতে হবে এবং দুটি সিজদা করতে হবে।
  • দুই সিজদা করার পর বসতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।

দুরুদ শরীফ আরবিতে:

اَللهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ - اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى أَلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيْدٌ -

দুরুদ শরিফ বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিম ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিম ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।


দুরুদ শরিফের বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! তুমি রহমত বর্ষণ করো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেমন রহমত বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রতি ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বরকত নাযিল করো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি, যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইব্রাহিম (আ.)-এর প্রতি ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।


দোয়া মাছুরা আরবিতে

اللَّهُمَّ اِنّى ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَعْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়া লা ইয়াগফিরুজ্ জুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।


দোয়া মাসুরা বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মার উপর অসংখ্য জুলুম করেছি এবং তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। অতএব আমাকে ক্ষমা করো তোমার নিজের পক্ষ থেকে এবং আমার প্রতি দয়া করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।


  • তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা শেষ করে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান কাঁধের দিকে সালাম ফিরাতে হবে এবং “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে বাম কাঁধের দিকে সালাম ফিরাতে হবে। এভাবে চার রাকাত সুন্নত নামাজ শেষ হবে।

যোহরের চার রাকাত ফরজ পড়ার নিয়ম

  • চার রাকাত সুন্নত নামাজের জন্য কেবলামুখী হয়ে নিয়ত করতে হবে, “আমি কেবলামুখী হয়ে যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি”। আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধতে হবে।
  • এবার ছানা পড়তে হবে এবং আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
  • সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোনো একটি সূরা পাঠ করতে হবে অথবা কোরআন শরিফের যেকোনো স্থান থেকে কমপক্ষে ৩ আয়াত পড়তে হবে।
  • এবার রুকুতে যেতে হবে এবং রুকুর তাসবিহ পড়তে হবে।
  • রুকু থেকে উঠার সময় “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলতে হবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় “রব্বানা লাকাল হামদ” (রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এক তাসবিহ পরিমাণ অপেক্ষা করতে হবে)।
  • দাঁড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবিহ “সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা” তিন, পাঁচ অথবা সাত বার পড়তে হবে। তারপর দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে এবং তাসবিহ পড়তে হবে।
  • এবার আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
  • এবার দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং তার সাথে আরেকটি সূরা পড়বেন এবং আগের ন্যায় রুকু এবং দুই সিজদা করার পরে বসে তাশাহুদ পড়বেন।
  • তাশাহুদ শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবেন এবং শুধু সূরা ফাতিহা পড়বেন। সূরা ফাতিহা পড়ার পর রুকু, সিজদা করবেন (ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোনো সূরা পড়তে হয় না)। তারপর চতুর্থ রাকাতের জন্য আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়িয়ে যাবেন।
  • এভাবে চতুর্থ রাকাতেও শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে রুকু, সিজদা করবেন এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন। চার রাকাত যোহরের ফরজ নামাজ এভাবে শেষ করতে হবে।

যোহরের দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়ার নিয়ম

  • নিয়ত করে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধতে হবে।
  • এবার সানা পড়তে হবে এবং আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।
  • সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোনো একটি সূরা পাঠ করবেন।
  • তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে এবং রুকু করার পর দুই সিজদা করতে হবে।
  • দুই সিজদা করার পর আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবেন।
  • এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং তার সাথে আরেকটি সূরা পড়বেন এবং আগের ন্যায় রুকু এবং দুই সিজদা করে বসতে হবে।
  • বসা অবস্থায় তাশাহুদ, দুরুদ এবং দোয়া মাসুরা পড়তে হবে। তারপর দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।

যোহরের দুই রাকাত নফল পড়ার নিয়ম

উপরে উল্লেখিত যোহরের দুই রাকাত সুন্নতের নিয়মেই দুই রাকাত নফল পড়তে হবে।

যোহরের নামাজের সময়

যোহরের নামাজের সময় শুরু হয় দুপুরের সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়লেই। অর্থাৎ সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিম আকাশের দিকে হেলে পড়লে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়।


যোহরের নামাজের শেষ সময়

আসরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত যোহরের নামাজের সময় থাকে। শীতকালে মোটামুটি বাংলাদেশ সময় সাড়ে তিনটা পর্যন্ত যোহরের সময় থাকে। গ্রীষ্মকালে আরেকটু বেশি পর্যন্ত সময় থাকে।