উপন্যাস কাকে বলে উপন্যাস হচ্ছে একটি নাতিদীর্ঘ আকারের কাল্পনিক বা বাস্তবধর্মী ঘটনার ক্রমিক বর্ণনা, যেখানে বিভিন্ন চরিত্র, প্রসঙ্গ, এবং কাহিনীর মাধ্যমে পাঠককে একটি নির্দিষ্ট গল্পের মাধ্যমে প্রভাবিত করানোর চেষ্টা করা হয়। উপন্যাস সাহিত্যে জগতের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা সাধারণত দৈর্ঘ্য, চরিত্রের বিকাশ, এবং গল্পের সংশ্লিষ্টতার কারণে অন্যান্য কথাসাহিত্যিক রচনার তুলনায় অনেক বড় পরিসরে লেখা হয়। এটি মানুষের জীবন ও সমাজের সমসাময়িক রুপ তুলে ধরে এবং একটি সম্পূর্ণ গল্পের ভেতর দিয়ে পাঠককে একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

উপন্যাস একটি লম্বা আকারের কথাসাহিত্যিক রচনা, যেখানে ঘটনা, চরিত্র, প্রসঙ্গ, এবং প্লটের ধারাবাহিকতায় জীবনের বিভিন্ন দিককে ফুটিয়ে তোলা হয়। উপন্যাসবিদগণের মতে এর দৈর্ঘ্য ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ শব্দের বেশি হয়। উপন্যাসে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চরিত্রের বিকাশ, গল্পের গভীরতা, সংলাপের বাস্তবিক উপস্থাপন, এবং কাহিনীর সুনির্দিষ্ট ব্যবহার।

উপন্যাস সাধারণত একটি দীর্ঘ রচনা আকারে লেখা হয়, যেখানে কাহিনীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে । ছোটগল্পের তুলনায় উপন্যাসের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি, যা লেখককে গল্পের অবয়ব এবং চরিত্রের জীবন বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করে।

উপন্যাসের চরিত্রসমুহকে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে দেখা যায়।  চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিত অবস্থা, সুনিপুন সামাজিক সম্পর্ক, এবং ব্যক্তি জীবনের সংকট সমূহ বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়, ইহাই পাঠককে চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিতে সহায়তা করে। 

উপন্যাসে প্লটের বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সফল উপন্যাসের প্লট ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং এর মধ্যে বিভিন্ন মোড় থাকে। প্লটের মূল উদ্দেশ্য হলো পাঠককে গল্পের সঙ্গে মুগ্ধ করে যুক্ত রাখা এবং একটি ধারাবাহিক কাহিনী তৈরি করা।

প্রত্যেক উপন্যাসের একটি প্রধান থিম বা বিষয়বস্তু থাকে, যা গল্পের মূল ভাবনা হিসেবে কাজ করে। থিম পাঠকের মনে একটি গভীর বার্তা পৌঁছে দেয় এবং গল্পের সার্বিক দিককে প্রভাবিত করে।

উপন্যাসে বাস্তবতা ও কল্পনার সুনিপুন সংমিশ্রণ থাকে। কিছু উপন্যাস সমসাময়িক ভাবে সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে লেখা হয়, আবার কিছু উপন্যাস কল্পনাপ্রসূত। বাস্তবতা ও কল্পনার এই মিশ্রণ উপন্যাসকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে।

উপন্যাসের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং এটি বিভিন্ন সাহিত্যিক ধারা ও গতানুগতিক সময়ের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে।

প্রাচীনকালে গ্রিক এবং রোমান সাহিত্যে উপন্যাসের আদিরূপ দেখা যায়। তবে আধুনিক অর্থে উপন্যাসের প্রকাশ ঊনবিংশ শতাব্দীতে হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রথম বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের সূচনা হয় । প্রথম বাংলা উপন্যাস হিসেবে ধরা হয় প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ (১৮৫৭)। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, এবং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লেখকরা বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা গড়ে তোলেন এবং বাংলা উপন্যাসকে একটি শক্তিশালী সাহিত্যমাধ্যমে রূপান্তর করেন।