Syed Ul Istighfar Bangla

ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি ও পথ হচ্ছে সাইয়েদুল ইস্তিগফার (Syed Ul Istighfar)। যদি সাইয়েদুল ইস্তিগফারকে ওষুধের কাতারে কল্পনা করা হয়, তা হলে এটা হবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শুধু একটা রোগ সারায় না; বরং শরীরের সব ব্যাকটেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। সাইয়েদুল ইস্তিগফারও তেমনই, এটারও অনেক ফজিলত রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায়- তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইস্তিগফার পড়ে, সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়- তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৩২৩)
ইস্তেগফারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ
ক্ষমা প্রার্থনায় তাওবাহ বা ইসতেগফারের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় কোরআন-সুন্নাহতে অনেক দোয়া ও ইসতেগফার রয়েছে।
তবে পড়তে সহজ ও ব্যাপক প্রচলিত দোয়ার মাধ্যমেও ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়। এমন ই ৫টি দোয়া তুলে ধরা হলো যার মাধ্যমে মুমিন মুসলমান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। আর তা হলো-
- أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
নিয়ম : প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ইসতেগফারটি ৩ বার পড়তেন। (মিশকাত)
- أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
নিয়ম : এ ইসতেগফারটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবাহ ও ইসতেগফার করতেন। (বুখারি)
- رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।
অর্থ : হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
নিয়ম : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
- أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।
অর্থ : আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।
নিয়ম : দিনের যে কোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করা। হাদিসে এসেছে- এভাবে তাওবাহ-ইসতেগফার করলে আল্লাহতাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ঘটনা ও ইতিহাস
হাসান বসরী রাহ. এর কাছে একবার এক ব্যক্তি জানালো “ তার ফসলে খরা লেগেছে। তাকে যেনো কোন আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন নিয়মিত এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর অন্য আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি অনেক গরীব। আমাকে কিছু রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন নিয়মিত এস্তেগফার করো।
এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হওয়ার আমল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, নিয়মিত এস্তেগফার করো।” সেখানে উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “ হুজুর সবাইকে একই পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ.তখন বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার পবিত্র কুরআনে শিখিয়েছে। তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)
নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে নিয়মিত এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অনেক ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপরে অজস্র বারিধারা ও রহমত বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)
যারা পেরেশানি মধ্যে আছেন, হতাশার মধ্যে আছেন, ডিপ্রেশনে আছেন, sadness, loneliness ইত্যাদি না্নান সমস্যার সম্মুখীন আছেন, তারা নিয়মিত এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম হচ্ছে, দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফার করা বা নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেওয়া। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম
এবার আসুন দেখে নেই সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম, বা কিভাবে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়বেন। যেহেতু এটি একটা দোয়া তাই আপনি যখন ইচ্ছা ফরজ নামাজের শেষে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়তে পারবেন। তাছাড়া সাধারণত এই দোয়া পড়া হয়।
- সকালের ফজরের নামাজের শেষে।
- বিকালে আসরের নামাজের শেষে।
- এছাড়া দিন রাত যখন খুশি এই দোয়া পড়তে পারবেন।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ফযীলত
এতোক্ষণ আমরা জানলাম সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি, ইতিহাস, পড়ার নিয়ম। তাহলে চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক এই দোয়ার ফযীলত কি, কেনো এই দোয়াকে ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়।
- হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
- হতাশা, মানসিক কষ্ট, মন খারাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই দোয়ার ফলে।
- যাদের বিয়ে হচ্ছে না, বা যাদের সন্তান হচ্ছে না তারা এই দোয়া বেশি বেশি পড়তে পারেন।
- যাদের অভাব অনটন লেগেই আছে তারা বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করবেন।