সময়ের মূল্য রচনা

Admin
November 30, 2024
275
সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে যখন যে কাজটি করা দরকার, ঠিক তখনি তা করা বোঝায়। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোই সময়ের সদ্ব্যবহার। আজ এ কাজটি করব না, কাল করব বলে ফেলে রাখা উচিত নয়।
বিশ্লেষণমূলক রচনা: সময়ের মূল্য
ভূমিকা
মানুষের জীবনে সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সম্পদ সময়। কেননা সময়ের যথাযথ ব্যবহারের ওপরই মানুষের জীবনের সফলতা নির্ভর করে। একজন মানুষ সময়কে যেমন মূল্যায়ন করবে সে তেমনি ফল পাবে। তাই সময়ের কাজ সময়ে করাই ভালো। একবার যে সময় অতীত হয়ে যাবে সে সময় আর কখনও ফিরে আসবে না। সময়কে মূল্যায়ন করতে হবে সবকিছুর উর্ধ্বে। সময়ের সঠিক ব্যবহারই পারে আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনকে স্মরণীয় করে রাখতে।
সময়ের সদ্ব্যবহার
সময়ের সদ্ব্যবহার বলতে যখন যে কাজটি করা দরকার, ঠিক তখনি তা করা বোঝায়। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোই সময়ের সদ্ব্যবহার। আজ এ কাজটি করব না, কাল করব বলে ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে সময় শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু কাজ বাকি থেকে যাবে। সময়ের সদ্ব্যবহারের ওপরই জীবনের সফলতা নির্ভর করে। পৃথিবীতে যত জ্ঞানীগুণী এসেছেন সকলেই সময়ের সদ্ব্যবহার করে অমরত্ব লাভ করেছেন। সময়ের যথাযথ ব্যবহারের ফলেই আজ সিঙ্গাপুর, জাপান প্রভৃতি দেশ উন্নতির স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে আছে।
ছাত্রজীবন ও সময়নিষ্ঠা
ছাত্রজীবন হচ্ছে মানুষের ভবিষ্যৎ ফসল জীবন গঠনের প্রস্তুতিপর্ব। সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর অভ্যাগ গড়ে তোলার প্রকৃষ্ট সময় ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও বিশ্রামের জন্যে সুষ্ঠু সময়- পরিকল্পনা করা দরকার। শ্রমকুণ্ঠ, সময়-অসচেতন, আলস্যপ্রিয় ছাত্র কেবল যে লেখাপড়ায় পিছিয়ে যায় তা নয়, বৃহত্তর জীবনের পদে পদে তাকে ফেলতে হয় ব্যর্থতার দীর্ঘস্বাস। তাই অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি সময়নিষ্ঠ হওয়ার শিক্ষাও ছাত্রজীবনে অর্জন করতে হয়। এ সময় সময়ানুবর্তিতা অভ্যাসে পরিণত হলে তার ভবিষ্যৎজীবনেও তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে।
মনীষীদের জীবনে সময়নিষ্ঠার তাৎপর্য
মানব-ইতিহাসে যাঁরা বরণীয় স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁদের জীবন সময়-সচেতনতার তাৎপরে্য ভাস্বর। খ-কালের জীবনে সময়ের শাসনকে স্বীকার করে নিয়েই তাঁরা জীবনকে দিয়েছেন পূর্ণতা, কালের বাঁধনকে অতিক্রম করে অর্জন করেছেন কালান্তরের অমরত্ব। বিশ্ববনেণ্য কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকরা সীমিত জীবনেই ফলিয়ে গেছেন চিরায়ত সাহিত্য ও শিল্পকর্ম। নিবেদিতপ্রাণ মহৎ দার্শনিক, বিজ্ঞানী অতন্দ্র সাধনায় জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন নব নব আবিষ্কারের অজস্র সম্পদে। মহৎ ধর্মসাধক, দার্শনিক, সমাজতাত্ত্বিক, রাষ্ট্রনায়কদের সীমিত খ–পরিসর জীবনের মহৎ অবদান ও ভূমিকায় অর্জিত হয়েছে মানুষের সমাজ ও সভ্যতার নব নব অগ্রগতি। এসব মহামানব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়েই পেয়েছেন সাফল্যের স্বর্ণমুকুট। মর জীবনে অর্জন করেছেন অমরত্বের মহিমা। তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা নিলে আমরা সময়ের মূল্য বুঝতে পারি। হতে পারি সময়ানুবর্তী ও সময়-সচেতন।
সময়ের গুরুত্ব
একটি পরিচিত প্রবাদ হল, ‘Time and tide wait for none.’ অর্থ—সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। মানুষের আয়ু বা জীবনকাল সীমিত। কিন্তু মানুষকে এই সীমাবদ্ধ জীবনে অনেক কাজ, অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই প্রতিটি মুহূর্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। এই মূল্যবান সময় বা মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে না লাগিয়ে হেলায় অতিবাহিত করলে। জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ক্ষতির জন্য আফসাসে করা যায় কিন্তু সেই সময়কে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বা সময়ের মূল্য অপরিসীম। কোনো পার্থিব সম্পদের মানদ-ে সময়ের মূল্য নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সময়ের সদ্ব্যবহার করা উচিত।
উপসংহার
আধুনিক কালে জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে জটিল ও বহুমুখী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্র অকল্পনীয়ভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। জীবন সংগ্রামে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। পারিবারিক, শিক্ষাগত, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক জীবনে নিত্য নতুন পরিস্থিতিতে অনেক কিছুর সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তাই সময়ের ব্যবহার হওয়া চাই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ফলপ্রসূ। তাহলেই স্বপ্নিল জীবনে আসবে সার্থকতা।