শব্দ কাকে বলে

Admin
December 09, 2024
358
শব্দ বলতে বোঝায় কিছু অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টিকে যা একটি বাক্য গঠনের মূল উপাদান। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ভাষার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল শব্দ। এক বা একাধিক ধ্বনি নিয়ে একত্রিত হয়ে যে অর্থ প্রকাশ পায় তাকে শব্দ বলে।
শব্দের প্রকারভেদ
শব্দের প্রকারভেদ নিয়ে ভাষাতাত্বিকদের কিছু মতবিরোধীতা আছে। তবে শব্দের প্রকারভেদকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
১। গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
২। অর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
৩। উৎপত্তি অনুযায়ী শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
শব্দের বৈশিষ্ট্যঃ
১। শব্দের ক্ষুদ্রতম একক বর্ণ। ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ধ্বনি।
২। বাক্যের মূল উপাদান / বাক্যের প্রাণ শব্দ
৩। বাক্যের মূল উপকরণ শব্দ
৪। বাক্যের ক্ষুদ্রতম একক শব্দ।
গঠনমূলক দিক থেকে শব্দ দুই প্রকার।
১। মৌলিক শব্দ
২। সাধিত শব্দ
মৌলিক শব্দঃ যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাদেরকে মৌলিক শব্দ বলে।
যেমনঃ তিন, লাল, গোলাপ, নাক, মা ইত্যাদি।
সাধিত শব্দঃ যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়।
যেমনঃ চাঁদের মত মুখ (সমাসবদ্ধ হয়ে) = চাঁদমুখ
ডুব + উরি (প্রত্যয় সাধিত হয়ে) = ডুবুরি
প্র + শাসন (উপসর্গযোগে) = প্রশাসন
হাত + ল = হাতল,
চল + অন্ত = চলন্ত,
মনু + অ/ ষ্ণ = মানব,
ধাতু + অ/ ষ্ণ = ধাতা,
এক + অঙ্ক = একাঙ্ক।
অর্থগতভাবে শব্দ তিন প্রকার।
১। যৌগিক শব্দ
২। রূঢ়ি শব্দ
৩। যোগরূঢ় শব্দ
যৌগিক শব্দঃ যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম তাদের যৌগিক শব্দ বলে।
যেমন : গায়ক= গৈ + ণক (অক) ; অর্থ = গান করে যে
কর্তব্য = কৃ তব্য; অর্থ = যা করা উচিৎ
বাবুয়ানা = বাবু + আনা; অর্থ = বাবুর অভাব
মধুর = মধু + র; অর্থ = মধুর মতো মিষ্টি গুণ যুক্ত
দৌহিত্র = দুহিতা + ষ্ণ্য; অর্থ = কন্যার পুত্র
চিকমার = চিক + মারা; অর্থ = দেওয়ালের লিখন
রূঢ়ি শব্দঃ যেসব শব্দের প্রকৃতি-প্রত্যয় জাত অর্থ এবং ব্যবহারিক অর্থ পৃথক হয় বরং লোক প্রচলিত অর্থ ব্যবহারিক অর্থ হিসেবে প্রকাশ পায় তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন
১। হস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়।
২। বাঁশি বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয় ।
যোগরূঢ় শব্দ যেসব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ সম্পূর্ণ পৃথক নয় বরং ব্যুৎপত্তিগত অর্থকে অনুসরণ করে ব্যবহারিক অর্থ প্রকাশিত হয় তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে।
যেমন : পঙ্কজ, মহাযাত্রা, রাজপুত, জলধি, সরোজ, ডাকাত ইত্যাদি যোগরূঢ় শব্দ।
উৎসগত দিক দিয়ে শব্দ ৫ প্রকার।
তৎসম
অর্ধ-তৎসম
তদ্ভব
দেশি
বিদেশি
তৎসম শব্দঃ যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে সোজাসুজি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তি রয়েছে , সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলা হয়। তৎ অর্থ সংস্কৃত, সম অর্থ সমান অর্থাৎ তৎসম অর্থ সংস্কৃতের সমান। তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ।
যেমনঃ চন্দ্ৰ, সূর্য, নক্ষত্র, পাত্র, ভবন, মনুষ্য, হস্ত, বৃক্ষ, ভ্রাতা, ভগ্নী, ধর্ম, পুষ্প, পিতা, মাতা, কর্মকার, চর্মকার, কৃষ্ণ, মস্তক, ঘৃত, রাত্রি, সন্ধ্যা, কর্ম, পর্বত, অল্প, অদ্য, কল্য, মুক্তি, পুত্র, দধি, ধূম্ৰ।
অর্ধ-তৎসম শব্দঃ বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়, এগুলোই অর্ধ-তৎসম শব্দ।
যেমনঃ জ্যোৎস্না<জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ< ছেরাদ্দ, গৃহিণী< গিন্নী, কুৎসিত< কুচ্ছিত।
বোষ্টম, কেষ্ট, চন্দর, গতর, বিষ্টু, তেষ্টা, হথ, নেমন্তন, সুয্যি, পুরুত, পেন্নাম, মশায়, কন্ন, খিদে।