রিসালাত

রিসালাত
Admin November 13, 2024 261
ইসলামী পরিভাষায় রিসালাত অর্থ হলো আল্লাহ্ তাআলার বার্তা বা ঘোষণা বা আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ সমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সৃষ্টির পরবর্তী থেকে মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহ্ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে নবী রাসুল আঃ পাঠিয়েছেন। এইসব নবী রাসুল আঃ গণ মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দিতো। তাওহীদের বাণী প্রচার করতো। এই তাওহীদের বাণী প্রচারের কাজই হচ্ছে রিসালাত।

রিসলাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব?

ইসলামি জীবনদর্শনে রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য৷ তাওহিদে বিশ্বাসের সাথে সাথে প্রত্যেক মুমনি ও মুসলিমকেই রিসালতে বিশ্বাস করতে হয়৷ ইসলামের মূলবাণী কালিমা তায়্যিবাতে এ বিয়ষটি সুন্দরভাবে বিবৃত হয়েছে৷ এ কালিমার প্রথমাংশ لَٓا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অর্থ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই)৷ দ্বারা তাওহিদের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ আর সাথে সাথে দ্বিতীয়াংশ

مُحَمَّدٌرَّسُوْلَ اللّٰهِ

(মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ: অর্থ মোহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল) দ্বারা রিসালাতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ সুতরাং তাওহিদে বিশ্বাস স্থাপনের ন্যায় রিসালাতেও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে৷

বস্তুত রিসালাতে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না৷ কেননা মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ৷ এ স্বল্প জ্ঞান দ্বারা অনন্ত অনীম আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়৷ তাই নবি রাসুলগণ মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরেছেন৷ তাঁর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ও গুণাবলির বর্ণনা প্রদান করেছেন৷ 
 
তাঁরা ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত জীবনবিধান ও দিকনির্দেশনা নিয়ে এসেছেন৷ হযরত মুহাম্মদ (স.) না আসলে নবি ও রাসুল সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে পারতাম না৷ এমনকি  আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও সিফাতের পরিচয়ও লাভ করতে পারতাম না৷ মূলত নবি রাসুলগণের আনীত বাণী ও বর্ণনার ফলেই মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে৷ 
 
সুতরাং নবি রাসুলগণের এ সমস্ত সংবাদ বা রিসালাতকে বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কেননা রিসালাতকে অস্বীকার করলে মহান আল্লাহকেই প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হয়৷ অতএব মানবজীবনে রিসালাতে বিশ্বাস করা ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে নির্ধারিত৷

নবি রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য?

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য অগণিত নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন৷ তাঁদের উদ্দেশ্যহীনভাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়নি বরং তাঁরা নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য তাঁদের বেশ কিছু কাজ করতে হতো৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতিপয় কাজ হলো তাঁরা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরতেন৷ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার জাত সিফাক ক্ষমতা নিয়ামত ইত্যাদি বিষয়ের কথা মানুষের নিটক প্রকাশ করেতেন৷
সত্য ও সুন্দর জীবনের দিকে আহবান জানাতেন৷ আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত ও ধর্মীয় নানা বিধি বিধান শিক্ষা দিতেন৷ 
পরকাল সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতেন৷

পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা৷ আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁদের নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করেছেন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন

اَللّٰهُ يَصْطَفِىْ مِنَ الْمَلٰٓءِكَةِ رُسُلًاوَّمِنَ النَّـاسِ  اِنَّ اللّٰهُ سَمِيْعٌ بَصِيْرٌ٥
 
অর্থঃ আল্লাহ তায়ালাই ফেরশতাদের মধ্যে থেকে এবং মানুষের মধ্যে থেকেও রাসুল মনোনীত করেন
আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা সম্যক দ্রষ্টা৷ (সূরা আল হাজ্জ আয়াত ৭৫)

সুতরাং মনোনীত বান্দা হিসেবে নবি রাসুলগণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন৷ প্রথমত তাঁরা ছিলেন একনিষ্ঠভাবে  আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাসী৷ সবধরনের কথায় ও কাজে তাঁরা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশের অনুসরণ করতেন৷ আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ আনুগত্যই ছিল তাঁদের প্রধান বৈশিষ্ট্য৷
 
নবি রাসুলগণ ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী বুদ্ধিমান সুবিবেচক ও বিচক্ষণ৷  তাঁরা ছিলেন নিষ্পাপ৷ তাঁরা সবধরনের পাপ পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র ছিলেন৷ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁদের সকল প্রকার অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতেন৷ হযরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ নবি৷ তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি তাঁকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম৷ সে তো চিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত৷ (সূরা ইউসুফ আয়াত ২৪)৷ 

নবি রাসুলগণ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী৷ সকল সৎগুণ তাঁরা অনুশীলন করতেন৷ তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সৎ সত্যবাদী ন্যায়পরায়ণ৷ দয়া ক্ষমা ধৈর্য ইত্যাদি সব ধরনের মানবিক গুণ তাঁদের চরিত্রে বিদ্যমান ছিল৷ মিথ্যা প্রতারণা পরনিন্দা হিংসা বিদ্বেষ ইত্যাদি খারাপ স্বাভাবের লেশমাত্র তাঁদের চরিত্রে কখনোই ছিল না৷ বরং তাঁরা ছিলেন সৎস্বভাবের জন্য মানবতির অনুপম আদর্শ৷

কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ব পালনে নবি রাসুলগণ ছিলেন অতুলনীয়৷ নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁরা বিন্দুমাত্র অলসতা ও উডসীতা প্রদর্শন করেনরি৷ বরং এজন্য কাফিরদের বহু অত্যাচার ও উপসীনতা প্রদর্শন করেননি৷ বরং এজন্য কাফিরদের বহু অত্যাচার ও নিপীড়ন ধৈর্যসহকারে সহ্য করেছেন৷ কিন্তু তারপরও তাঁরা যথাযথভাবে মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী পৌঁছিয়েছেন তাঁরা ছিলেন রির্লোভ ও রিঃস্বার্থ৷ পার্থিব কোন লাভের আশায় তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব থেকে কখনো পিছপা হননি৷ কাফিরবা ইসলামের দাওয়াত প্রচার বন্ধ করার জন্য তাঁদের নানা প্রলোভন দেখাত৷ কিন্তু তাঁরা পার্থিব স্বার্থের কাছে মাথা নত করেননি৷ দীন প্রচারে নবি রাসুলগণ ছিলেন ত্যাগের মূর্ত প্রতীক৷
 
বিনা দ্বিতীয় পার্থিব আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস ধন সস্পদ তাঁরা আল্লাহ নির্দেশে ত্যাগ করেতেন৷দীন প্রচারের স্বার্থে প্রিয়নবি (স.) বাড়ি ঘর আত্মীয় স্বাজন এমনকি নিজ দেশ মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেছিলেন৷  নবি রাসুলগণের জীবনীতে ত্যাগের এরকম আেও অসংখ্য উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়৷

নবুয়তের ধারা

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন৷ সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.) আর সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.) এঁদের মাঝখানে আল্লাহ তায়ালা আরও বহু নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন৷ নবি রাসুলদের আগমনের এই ধারাবাহিকতাই নবুয়তের ক্রমধারা বলা হয়৷ দুনিয়াতে আগত সকলে গোষ্ঠী বা জাতির জন্যই আল্লাহ তায়ালা নবি রাসুল বা পথপ্রদর্শনকারী পাঠিয়েছেন৷

وَلِـكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ٥
 
অর্থঃ আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই পথপ্রদর্শক রয়েছে৷ (সূরা আর রাদ আয়াত ৭)৷ 
তাঁরা মানুষকে এক আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকতেন৷ সত্য ও সুন্দর জীবনবিধান তথা আল্লাহর দীন অনুসরণের নির্দেশ দিতেন৷ সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শরিয়ত তথা দীনের বিধি বিধান এক রকম ছিল না৷ বরং মানবজাতির পরিবেশ পরিস্থিতি সভ্যতা সংস্কৃতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন শরিয়ত দেওয়া হতো৷ নবি রাসুলগণ তা মাননসমাজে বাস্তবায়ন করতেন৷ তবে সব নবি রাসুলের দীনের মৌলিক কাঠামো ছিল এক ও অভিন্ন৷ 
 
আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ বা তাওহিদ ছিল সবারই প্রচারিত দীনের মূলকথা৷ হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে আগত সকল নবি রাসুলই এ দীন প্রচার করেছেন  হযরত নূহ (আ.) হযরত ইবরাহিম (আ.) হযরত মুসা (আ.) হযরত দাউদ (আ.) হযরত ঈসা (আ.) সকলেই এই একই দীন ও শিক্ষা প্রচার করেছেন৷ আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন নবুয়তের ধারার সর্বশেষ নবি৷ তাঁর পরে আর কোন নবি আসেননি আসবেনও না৷ সুতরাং আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে দীনের পূর্ণতা প্রদান করেন৷আল্লাহর তায়ালা ঘোষণা করেন
 
 اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِىْ وَرَضِيْتُ لَـكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًـا
 
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম৷ (সূরা আল মায়িদা আয়াত ৩) এভাবে দীনের বিধি বিধান পূর্ণতা প্রাপ্তির ফলে নবি রাসুলগণের আগমনের ধারাও বন্ধ হয়ে যায়৷ ফলে নবুয়তের ধারাও পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়৷ মানুষের হিদায়েতের জন্য আগমনকারী এসব নবি রাসুল সকলেই ছিলেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা৷ তাঁদের সকলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অপরিহার্য৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন

 اٰمَنَ الرَّسُوْلُ بُمَـآ اُنْزِلَ اِلَيْهِ مِنْ رَّبِّهٖ وَالْمُؤْنَ   كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَمَلٰٓءِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ  لَانُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍمِّنْرُّسُلِهٖ
 
অর্থঃ রাসুল তাঁর প্রতি প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ইমান এনেছেন এবং মুমিনগণও৷ তাদের সবাই আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাগণ তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসুলগণে ইমান এনেছে৷ তারা বলে আমরা তাঁর রাসুলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না৷ (সূরা আল বাকারা আয়াত ২৮৫)

নবুয়তের ধারায় আগমনকারী সব নবি রাসুলকে বিশ্বাস করা ইমানের অপরিহার্য শর্ত৷ এঁদের কাউকে বিশ্বাস এবং কাউকে অবিশ্বাস করা যাবে না৷ বরং সকলকেই আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত নবি রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে৷ নবি রাসুল হিসেবে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে৷ কারও প্রতিই কোনরূপ ঠাট্টা বিদ্রূপ বা কটাক্ষ করা যাবে না৷
নবুয়তের ধারার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ছিলেন আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) তিনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্টের অধিকারী৷ 
 
দুনিয়াতে আগমনকারী সব নবি রাসুলই কোন বিশেষ গোত্র বিশেষ দেশ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন৷ কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সারা বিশ্বের সকল স্থানের সকল মানুষের নবি৷ তিনি বিশ্বনবি৷
আল্লাহ তায়ালা বলেন
 
 قُلْ يٰٓاَيُّهَا النَّـاسُ اِنِّىْ رَسُوْلُ اللّٰهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعًاجَمِيْعًا
 
অর্থঃ (হে নবি) আপনি বলুন হে মানবমুন্ডলী আমি তোমাদের সকলের জন্যই আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রিরিত৷ (সূরা আল আরাফ আয়াত ১৫৮)

রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন সর্বকালের নবি৷ কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমন করবে সকলের নবি তিনিই৷ তাঁর শিক্ষা আদর্শ ও আনীত কিতাব আল কুরআন সকলকেই অনুসরণ করতে হবে৷ তিনি রহমতের নবি৷ মানবজাতির জন্য তিনি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত ও অনুগ্রহ স্বরূপ৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন

وَمَٓا اَرْسَلْنٰكَ اِلَّارَحْمَةًلِّلْعٰلَمِيْنَ٥
 
অর্থঃ (হে নবি) আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি৷ (সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ১০৭)

অতএব আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি৷ হযরত মুহাম্মদ (স.) কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হিসেবে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি কর্তব্য৷ হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ নবি৷ তাঁর মাধ্যমে দীনের পূর্ণতা ঘোষিত হয় এবং নবুয়তের ধারা সমাপ্ত হয়৷ তিনি নবি রাসুলগণের ধারায় সর্বশেষে আগমন করেছেন৷ আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং তাঁকে খাতামুন নাবিয়্যন তথা সর্বশেষ নবি বলে অভিহিত করেছেন৷

খাতামুন অর্থ শেষ সমাপ্তি৷ আর নবুয়ত হল নবিগণের দায়িত্ব৷ সুতরাং খতমে নবুয়তের অর্থ নবিয়তের সমাপ্তি৷ আর যার মাধ্যমে নবুয়তের ধারার সমাপ্তি ঘটে তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবি৷  আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন৷ এঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিলেন হযরত আদম (আ.)৷ আর সর্বশেষ ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)৷ হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে নবি রাসুলগণের আগমনের ধারা শেষ বা বন্ধ হয়ে যায়৷ সুতরাং তিনিই সর্বশেষ নবি বা খাতামুন নাবিয়্যিন৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন
 
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَآاَحَدٍمِّنْ رِّجَـا لـِكُمْ وَلٰـكِنْ رَّسُوْلَ اللّٰهِ وَجـَا تَمَ النَّبِيّٖنَ
 
অর্থঃ মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবি৷ (সূরা আল আহযাব আয়াত ৪০)৷ খাতামুন শব্দের অন্যতম অর্থ সিলমোহর৷ কোন কিছুতে সিলমোহর তখন অঙ্গিত করা হয় তখন তক পূর্ণ হয়ে যায়৷ সিলমোহর লাগানোর পর তাতে কোন কিছু প্রবেশ করানো যায় না৷ নবুয়তের সিলমোহর হল নবুয়তের পরিসমাপ্তির ঘোষণা৷ নবুয়তের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি ঘোষণা৷ 
 
অর্থাৎ নতুনভাবে কোন ব্যক্তি নবি হতে পারে না এবং নবুয়তের ধারায় প্রবেশ করতে পারবে না৷ এটাই হলো খতমে নবুয়তের মূল কথা৷ আমাদের প্রিয় নবি(স.) হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন৷ তিনি সর্বশেষ নবি৷ তাঁর পরে আর কোন নবি নেই তাঁর পরে আজ পর্যন্ত কোন আসেননি৷ কিয়ামত পর্যন্ত আসবেনও না৷ তাঁর পরবর্তীতে যারা নবুয়ত দাবি করেছে তারা সবাই ভন্ড মিথ্যাবাদী ও প্রতারক৷ কেননা মহানবি (স.) বলেছেন
               
اَنَا خَاتَمُ النَّبِيّٖنَ لَا نَبِىَّ بَعْدِىْ
 
অর্থঃ আমিই শেষ নবি৷ আমার পরে কোন নবি নেই৷ (সহিহ মুসলিম)৷ 

অন্য একটি হাদিসে মহানবি(স.) বলেছেন অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে৷ তারা প্রত্যেকেই নবি হওয়ার দাবি করবে৷ অথচ আমিই সর্বশেষ নবি৷ আমার পর আর কোন নবি আসবে না৷ (আবু দাউদ)

হযরত মুহাম্মদ (স.) কে খাতামুন নাবিয়্যিন হিসেবে বিশ্বাস করা ইমানের অন্যতম অঙ্গ৷ তাঁর পরবর্তীতে যারা নবি বলে দাবি করেছে সবাই মিথ্যবাদী৷ আমরা তাদের নবি হিসেবে বিশ্বাস করব না তাদের শিক্ষা আদর্শ বর্জন করব৷
আমরা জীবনের সর্বাবস্থায় মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করে চলব৷