রচনা: নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য
-6697579c62ae8.png)
ভূমিকা:
’নাগরিক’ কথাটির অর্থ অতি ব্যাপক। সাধারণভাবে নাগরিক বলতে কোনো নগরের অধিবাসীকে বোঝায়। কিন্তু বর্তমানে বৃহত্তর অর্থে কোনো রাষ্ট্রের অধিবাসীকে নাগরিক বলা হয়। গ্রিসের ক্ষুদ্র নগর তথা রাষ্ট্রের অধিবাসী সে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রথম যে স্বীকৃতি লাভ করেছিল তা বহুকালের বিচিত্র পরিবর্তন ও বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানে বৃহত্তর অর্থের পরিধিতে পৌঁছেছে। তাই আজকের দিনে নাগরিক বিশেষ কোনো নগরের অধিবাসী নয়, শহর, বন্দর, গ্রামগঞ্জ যে যেখানেই থাকুক না কেন সে সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেসে পরিচিত।
নাগরিক:
নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি বা উপায় আছে। দেশে দেশে তা ভিন্নধর্মী। তবে দেশে দেশে নাগরিকত্ব অর্জনের বিভিন্ন রূপ থাকলেও সাধারণভাবে প্রত্যেক নাগরিকের কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। পাশাপাশি দেশ নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে থাকে। নাগরিক হিসেবে দেশের প্রতি আমাদের যেসব দায়িত্ব থাকে সেগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা নাগরিকের প্রয়োজনীয় কর্তব্য সম্পাদন করে থাকি। তাই নাগরিক কথাটির সঙ্গে কর্তব্য ও দায়িত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান।
নাগরিক অধিকার:
প্রতিটি রাষ্ট্রের নাগরিকেরই সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার থাকে। তাছাড়া কতগুলো মৌলিক অধিকারও নাগরিকরা ভোগ করে থাকে। যেমন- বাঁচার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসা লাভের অধিকার, বাসস্থানের অধিকার ও ধর্ম পালনের অধিকার। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য এসব অধিকার রক্ষার চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে, নাগরিকেরও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়, তা না হলে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে।
কর্তব্য:
একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকের কর্তব্য অপরিসীম। জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতি নাগরিকদের কর্তব্য পালনের মধ্যে নিহিত। নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি নাগরিকদের কর্তব্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বলে সবার বিশেষভাবে সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। দেশের সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের সুখশান্তির নিশ্চয়তা বিধানে নাগরিকদের যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। দেশের সার্বিক কল্যাণে সব শ্রেণির নাগরিকের দায়িত্ব সচেতন হতে হবে এবং এতেই দেশের প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।
রাষ্ট্রীয় কর্তব্য:
নাগরিককে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে বিশেষ কতকগুলো কর্তব্য সম্পাদন করতে হয়। নাগরিককে অবশ্যই দেশের আইন কানুন মেনে চলতে হবে। নাগরিককে সরকার নির্ধারিত কর নিয়মিত প্রদান করতে হবে।
উপসংহার:
আমাদের দেশে বর্তমানে অগণিত সমস্যা জাতীয় জীবনকে নিপীড়িত করছে। এসব সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেশের পরিচালকমণ্ডলীর হাতে ন্যস্ত থাকলেও জনগণ তা থেকে মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। তাই নাগরিকদেরকে দেশ গঠনমূলক পরিকল্পনা দান করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নিজ নিজ কর্তব্য পালন করতে হবে। দেশের উন্নতির জন্য শান্তি-শৃঙ্খলার প্রয়োজন। নাগরিকরা যদি কর্তব্যসচেতন হয় তবে দেশ শৃঙ্খলার মাধ্যমে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন, সরকারি আদেশ-নিষেধ অনুসরণ ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করলে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। অনেক স্বার্থপর ব্যক্তি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনাচারের আশ্রয় নেয়, নাগরিকগণকে তা রোধ করতে হবে। চোরাচালান, কালোবাজারি, দুর্নীতি রোধকল্পে নাগরিকদের কাজ করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ দুটি মৌলিক কাজে নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা উচিত, দেশ সরকারের নয়, জনগণের। দেশের কল্যাণের দায়িত্ব সম্পর্কে নাগরিকরা কর্তব্যপরায়ণ না হলে শুধু সরকারের পক্ষে দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধন করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।