রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা

রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা
Admin January 26, 2025 101
পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা খাবারের একটি তালিকা করি, সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে ‘মধু’র নাম। এটি শরীরের জন্য উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত।

মধুঃ

মধু হল মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক এ্যান্টিবায়োটিক । যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় ৷ মধুতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ আমাদের শরীরে তৎক্ষনাৎ এনার্জি যোগায় ৷ এছাড়া মধুতে রেয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, অ্যামাইনো এসিড, খনিজ লবণ ইত্যাদি ৷

মধুতে বিদ্যমান উপাদানসমূহঃ

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশমন্টোজ। আরও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশএনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।

মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতাঃ

আসুন প্রথমে আমরা জেনে নিই, নিয়মিত মধু পান করলে আমরা কি কি উপকার পাব। এরপর কিভাবে মধু খেলে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল হবে, বা মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময় কি, কিংবা কোন মধুটি আমাদের জন্য সবচেয়ে উপকারী, এগুলি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

মধুর উপকারিতাঃ

সুস্থ থাকতে নিয়মিত খাঁটি মধু খাওয়ার কোন বিকল্প নেই ৷ ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি মধুতে কি কি খাদ্য উপাদানসমুহ বিদ্যমান রয়েছে। তবে আমাদেরকে নিয়মিত মধু খাওার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই, মধুতে বিদ্যমান এই বিশেষ খাদ্য উপাদানগুলি আমাদের শরীরে বিশেষ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে । আমরা সবসময় মধু নিয়মিত খাওয়ার কথা বলে থাকি কারণ, অনিয়মিত মধু পানে যে উপকার আপনি পাবেন তা তেমনভাবে পরিলক্ষিত হবেনা । এ পর্যায়ে খাঁটি মধুর উল্লেখযোগ্য উপকারিতাসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরছিঃ

  • মধুতে বিদ্যমান রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর ফলে নিয়মিত খাঁটি মধু পানে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
  • মধু আমাদের শরীরে তৎক্ষনাৎ শক্তি যোগায়, শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শরীরে তাপ উৎপন্ন করে ।
  • মধু আমাদের শরীরে খাবারের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে ৷
  • যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, মধু তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারি। রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তার মাধ্যমে মধু শরীরের রক্তশূণ্যতা দূর করে। 
  • মধু আমাদের শরীরে রক্তনালী প্রসারণের মাধ্যমে হৃদপেশির কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
  • মধুতে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদানসমূহ। নিয়মিত মধু পানে আমাদের শরীরে এসব খজিনের (কপার, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি) অভাব পূরণ হয়৷
  • মুখের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ঘায়ের চিকিৎসায় মধু খুবই কার্যকরী এবং মধু আমাদের দাঁতকে মজবুত করে।
  • মৌসুমি সর্দি, জ্বর উপশমে তুলসি পাতার রসের সঙ্গে খাঁটি মধু মিশিয়ে কয়েকদিন নিয়মিত পান করলে এটা দারুণভাবে কাজ করে।
  • যারা ফুসফুসের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন এমনকি যাদের ফুসফুস করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ তাদের জন্যও মধু খুবই কার্যকরী৷
  • মধু দিয়ে গাঁজানো রসুন নিয়মিত সেবনে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন নিরাময়, শরীরের ওজন কমানো, রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমানো, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি উপকারিতা পাওয়া যায়।
  • মধু শিশুদের হাড়ের গঠন মজবুত করে, দৃষ্টিশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • রাতের বেলা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে আপনার অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করবে।
  • শারীরিক এবং যৌন দূর্বলতা দূরীকরণে মধুর রয়েছে বিশেষ ভূমিকা ৷
  • মধু পানে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয় ৷
  • নিয়মিত মধু পান বাতের ব্যথা উপশম করে।
  • মধুতে বিদ্যমান অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বকের রং সুন্দর করে এবং তারুণ্যতা বজায়ে রাখতে সহায়তা করে ৷ 
  • মুখের ব্রণ এর চিকিৎসায়, ত্বক এবং চুলের রূপচর্চায় মধু ব্যবহারে বিশেষ সুফল পাওয়া যায় ৷

মধু খাওয়ার নিয়মঃ

মধু খাওয়ার বিশেষ তেমন কোন নিয়ম নেই । তবে অবশ্যই নিয়মিত মধু পান সর্বোত্তম৷ এতে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক শক্তিশালী হবে । পাশাপাশি যে উপকারিতাগুলি পাবেন সেগুলিও দৃশ্যমান হবে। আপনি পূর্বের থেকে অবশ্যই ভাল অনুভব করবেন । এই পর্যায়ে আপনাদের জন্য আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম গুলি তুলে ধরছিঃ

  • প্রতিদিন সকালে ১-২ চা চামচ মধু সরাসরি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন । এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী ।
  • মধু শরীরের ওজন কমাতে কাজে লাগে। রোজ সকালে কুসুম গরম পানির সাথে ১ – ২ চা চামচ মধুর সঙ্গে হালকা লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে পান করবেন । এতে আপনার শরীরের মেদ কমবে ।
  • কাঁচা ছোলার ভিজিয়ে রেখে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত দূর হবে।
  • ব্রেড বা রুটির সাথে জেলি কিংবা নসিলা এর পরিবর্তে মধু খেতে পারেন ৷ এটি খেতে বেশ সুস্বাদু। পাশাপাশি অধিক এনার্জী পাবেন ৷
  • চায়ের সঙ্গে চিনি এর পরিবর্তে মধু পান করতে পারেন ৷ চিনিকে বলা হয়ে থাকে ‘হোয়াইট পয়জন’। এটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷ 
  • দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন ৷ এটি খুবই উত্তম একটি পানীয় ৷ তবে অবশ্যই দুধ গরম থাকা অবস্থায় এতে মধু দিবেন না । তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে তখন মধু মিশিয়ে খাবেন ৷

মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ

সারাদিনের যেকোন সময়েই আপনি মধু পান করতে পারেন। দিনের যেকোনো সময়ে আপনি যখনই ক্লান্ত অনুভব করবেন মধু খেলে তৎক্ষণাৎ প্রশান্তি পাবেন এবং শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি যোগাবে।
তবে মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকালে খালি পেটে মধু পান করা। এতে অধিক উপকারিতা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি সকালে খালি পেটে কয়েক চামচ মধু হাতের তালুতে নিয়ে চেটে খেতে পারেন। কিংবা মধু দিয়ে শরবত তৈরি করেও পান করতে পারেন। শরবতে লেবুর রস, চিয়া সিড এগুলি ব্যবহার করতে পারেন।