প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
-6746b6896fe45.jpg)
Admin
November 27, 2024
403
যে কবিকে পর করেছে তাকেই আপন করতে কবির প্রাণ কাঁদে। কবি সবাইকে আপনজন মনে করেন। তিনি কাউকে শত্রু ভাবতে পারেন না। তাই যারা কবিকে ভুল বুঝে পর করে দেয়, কবি তাদের জন্যই কেঁদে বেড়ান। কারণ তারা তাকে পর ভাবলেও কবি তা ভাবেন না। পরম মমতায় তাদের আপন করতে চান। পাপী-অন্যায়কারী-ভুল পথে চলা মানুষ আসলে অসহায়। তাই কবি অন্যায়কারীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করে পাপীর মঙ্গল চান।
কবিতায় কবি কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করতে চান
প্রতিহিংসা আর নিষ্ঠুর বদলায় মানুষ সুখী হয় না। হয়তো সাময়িক সুখ মনে আসতে পারে, কিন্তু মানবতাকামী মানুষ এসব দেখে হতাশ হন। যুদ্ধ কখনো পৃথিবীতে শান্তি আনেনি। কবি বিশ্বাস করেন, অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে তার উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর করা সম্ভব। কেউ ক্ষতি করেছে বলে প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে তারও ক্ষতি করতে হবে কবি তা মানতে নারাজ, তা কবির মানবধর্ম নয়। তাই কবিকে কেউ কাঁটা দিলে, হিংসা করলে কবি তাকে প্রতিদানে ফুল উপহার দেন। অর্থাৎ কেউ তার অনিষ্ট করলে বিনিময়ে তার মঙ্গল
সাধন করেন। হিংসার বিপরীতে কবি প্রতিহিংসায় বিশ্বাসী নন।
মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি
মানবিক মানুষ অহিংস। কবি বিশ্বাস করেন প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয় বরং ভালোবাসাই জীবনের আদর্শ হওয়া উচিত। তাই কবিকে কেউ দুঃখ-কষ্ট দিলে তিনি ক্ষমা করে তাকে ভালোবাসা উপহার দিয়েছেন। এই চিন্তা থেকেই কবি কবরের বিনিময়ে মালঞ্চ উপহার দিয়েছেন। সহনশীলতা ও প্রীতিতে বিশ্বাসী বলে যে কবির বুকে ব্যথার কবর বেঁধেছে, কবি তারই বুক ফুল মালঞ্চে ভরিয়ে দিতে চান। যে কবিকে আঘাত করে, কবি তাকেই বুকে টেনে নেন। সহনশীলতা, ক্ষমা এবং ভালোবাসাই সংকটের সমাধান। তাই অনিষ্টকারীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নিয়ে কবি তার উপকারে ব্রতী হন। ভালোবাসাই পরম মানবিক অস্ত্র।
প্রতিদান কবিতায় অনিষ্টকারীর উপকার করার কথা বলা হয়েছে
কবিতায় কবি ভালোবাসাপূর্ণ সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের আকাঙ্ক্ষায় অনিষ্টকারীর উপকার করতে বলেছেন।পরার্থপরতাই জীবনের ধর্ম। মানবধর্ম মানেই মানবিকতা। ‘প্রতিদান’ কবিতায় ক্ষুদ্র স্বার্থকে পরিহার করে বৃহৎ স্বার্থের কথা ভাবা হয়েছে। তাছাড়া সমাজে বিদ্যমান হানাহানি-হিংসার পথ পরিহার করে ভালোবাসা, ক্ষমা, উদারতার পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কবি মনে করেন, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই পৃথিবীকে সুন্দর করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে তার দিকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আজকের যুদ্ধবিধ্বস্ত, ভোগবাদী পৃথিবীতে কবির প্রেমের বাণী শান্তির করুণাধারা হয়ে উঠতে পারে।