প্রথা (ঐতিহ্য) এর অর্থ এবং আমাদের জীবনে এর তাৎপর্য আবিষ্কার করুন। ঐতিহ্য কীভাবে সংস্কৃতি গঠন করে, ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মূল্যবোধ প্রেরণ করে তা অন্বেষণ করুন। বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্য, তাদের উৎপত্তি এবং তাদের ক্রমবিকাশশীল ভূমিকা সম্পর্কে জানুন। আধুনিক সমাজ প্রথা এবং অনুশীলনের আকর্ষণীয় জগতে ডুব দেয় যা আমাদের শিকড়ের সাথে সংযুক্ত করে।
প্রথা কি?
প্রথা হলো মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত রীতি ও ব্যবহার বিধি। লোকাচার ও লোকনীতি মান্য করে চলা মানবসমাজে অভ্যাসগত ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়, একেই বলে প্রথা।
মাজ অনুমোদিত মান ও জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে প্রথা ব্যক্তিকে বাধ্য করে। ব্যক্তির আচরণের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রথাসমূহকে যথাযথভাবে পালন করা উচিত বিবেচনা করা হয়। সুদূর অতীত থেকে এ ধারা চলে আসছে বলে প্রথার মধ্যে তিনটি উপাদানের সন্ধান পাওয়া যায়; একই প্রকার পৌনঃপুনিক আচরণ সামাজিক প্রকৃতি এবং মূল্যমান।
অধ্যাপক জিসবার্ট প্রথার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। যথা:
ক. আচরণের ধারাবাহিকতা
খ. সামাজিক প্রকৃতি এবং
গ. আদর্শগত মূল্যমান
প্রথা ও ঐতিহ্য
বাংলাদেশের প্রথা ও ঐতিহ্য বিচিত্র এবং আকর্ষণীয়। এর অনেকগুলি এসেছে প্রাগৈতিহাসিক স্তর থেকে। অনেক প্রথা যুগে যুগে বহন করে নিয়ে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই উপমহাদেশে আগত শত শত আদিবাসী। এসব আদিবাসীরা আজও তাদের সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছে বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে এবং পাহাড়-পর্বতে। এদের পূর্বপুরুষরা ছিল হয় নেগ্রিটো অথবা প্রোটো-অস্ট্রালয়েড বা প্রোটো-মঙ্গোলয়েড কিংবা ককেশিয়াড। এদের পরে পশ্চিম এশিয়া থেকে আসে আর্যগণ। বাংলাদেশের বহুজাতিক জনগোষ্ঠী সৃষ্টির পেছনে রয়েছে দেশটির নদীবিধৌত ভূমির উর্বরতা, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং ধন-সম্পদের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি। এসবের আকর্ষণে এসেছে বহু আদিবাসী, আগ্রাসী ভিনদেশি, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য ভাগ্যান্বেষী। বহু জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে সৃষ্ট বাঙালি জাতির এক প্রধান অংশ ছিল অনার্য। উর্বর জমি এবং খাল-বিল, নদ-নদীর প্রাচুর্যের ফলে কৃষি এবং মৎস্য আহরণ হয়ে দাঁড়ায় জনগণের উপার্জনের প্রধান উপায়। চাল, সবজি এবং মাছ তাদের প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠে। ফলে অনেক প্রথাই হয়
বাঙালির প্রিয় পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ দিনটি এপ্রিলের মাঝামাঝি পড়ে এবং সারা দেশে উৎসবের মাধ্যমে পালিত হয়। এই দিনটির শুরু হয় ইলিশ মাছ ও সবজি দিয়ে পান্তাভাত খাওয়ার মাধ্যমে অথবা চিড়া-গুড় ও দইয়ের নাস্তা দিয়ে। পুরুষ-নারী এবং শিশুরা নতুন কাপড় পরে বটের তলায় বা নদীর ধারে অনুষ্ঠিত মেলায় যায়। এসব মেলায় হরেক রকমের ব্যবহারিক জিনিসপত্র, বহু রকমের খাবার, মিষ্টি ও বাচ্চাদের খেলনা পাওয়া যায়। সকল শ্রেণির লোকদের আনন্দের জন্য থাকে নাগরদোলা, ঘোড়ায় চড়া, ভাগ্য পরীক্ষার খেলা, যাত্রা, পুতুলনাচ। সকল ব্যবসায়ী দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে এবং এদিন তারা হালখাতা খোলে। সৌভাগ্যের চিহ্নস্বরূপ হিন্দুরা এসব খাতায় সিঁদুর মাখিয়ে দেয়। শহর এলাকায়ও পয়লা বৈশাখ জনপ্রিয়। ঢাকায় দিনটি বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে গান-বাজনা, শোভাযাত্রা এবং মেলার মাধ্যমে পালন করা হয়। কোন কোন মেলা এক সপ্তাহ ধরে চলে। প্রায়ই দেখা যায় এ দিনটির শেষে প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড় এবং প্রচুর বৃষ্টি হয়। এ ঝড়ে জান-মালের ক্ষতিও হয়, তবে তা গ্রীষ্মের দাবদাহ একেবারেই কমিয়ে আনে।