অভিস্রবণ কাকে বলে

অভিস্রবণ কাকে বলে
Admin March 01, 2025 61
অভিস্রবণ প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য আমাদের যে বিষয়ের ধারণা দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ট দুইটি দ্রবণের মধ্যে অবস্থিত পর্দার বৈশিষ্ট্য জানা। পর্দাকে সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, অভেদ্য পর্দা, ভেদ্য পর্দা ও অর্ধভেদ্য পর্দা।

অভেদ্য পর্দা: যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও প্রাব উভয় প্রকার পদার্থের অণুগুলো চলাচল করতে পারে না তাকে অভেদ্য পর্দা বলে। যেমন- পলিথিন, কিউটিনযুক্ত কোষপ্রাচীর। ভেদ্য পর্দা : যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয়েরই অণু সহজে চলাচল করতে পারে তাকে ভেদ্য পর্দা বলে ৷ যেমন— কোষপ্রাচীর।

অর্ধভেদ্য পর্দা: যে পর্দা দিয়ে কেবল দ্রবণের দ্রাবক অণু (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পানি) চলাচল করতে পারে কিন্তু দ্রাব অণু চলাচল করতে পারে না তাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে। যেমন— কোষপর্দা, ডিমের খোসার ভিতরের পর্দা, মাছের পটকার পর্দা ইত্যাদি।

অভিস্রবণ কাকে বলে?

অভিস্রবণ বলতে এমন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে একটি অর্ধভেদ্য পর্দার মাধ্যমে কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে বেশি ঘনত্বের দ্রবণে দ্রাবক (সাধারণত পানি) স্থানান্তরিত হয়, যতক্ষণ না দুই পক্ষের ঘনত্ব সমান হয়। অভিস্রবণ কাকে বলে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, কারণ এটি কোষের মধ্যে ও বাইরে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

অভিস্রবণ এর প্রকারভেদ

অভিস্রবণ সাধারণত দুই ধরনের হয়:
১। অন্তঃঅভিস্রবণ
২। বহিঃঅভিস্রবণ

অন্তঃঅভিস্রবণ: যখন পানির কণা কোষের বাইরের ঘনত্ব থেকে কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, তখন এই প্রক্রিয়াকে অন্তঃঅভিস্রবণ বলে।
উদাহরণ: গাছের মূল মাটি থেকে পানি শোষণ করে কোষের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়ক।

বহিঃঅভিস্রবণ: বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে যখন পানির কণা কোষের অভ্যন্তর থেকে বাহিরের বেশি ঘন দ্রবণে প্রবাহিত হয়।
উদাহরণ: আঙ্গুর চিনির দ্রবণে রাখলে এর অভ্যন্তরের পানি বাইরের দ্রবণে চলে আসে এবং আঙ্গুরটি চুপসে যায়।

অভিস্রবণ এর গুরুত্ব

অভিস্রবণ প্রাণী ও উদ্ভিদের কোষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। এটি পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়ক। উদ্ভিদ এবং প্রাণীকোষের জন্য অভিস্রবণের গুরুত্বগুলো হলো:

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে: গাছের মূল মাটি থেকে পানি ও প্রয়োজনীয় খনিজ শোষণ করতে অভিস্রবণ ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়া ছাড়া গাছপালা বেঁচে থাকতে পারবে না এবং উদ্ভিদের জন্য পানির অভ্যন্তরীণ প্রবাহ ব্যাহত হবে​।

প্রাণীর ক্ষেত্রে: অভিস্রবণ শরীরের বিভিন্ন কোষে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যেমন রক্তকোষের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রবণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ।

অভিস্রবণ এর বাস্তব উদাহরণ

গাছের পানি শোষণ: উদ্ভিদের মূলকোষের মাধ্যমে পানি মাটি থেকে শোষিত হয়, যা অভিস্রবণের মাধ্যমে উদ্ভিদকে পুষ্টি যোগায় এবং তাদের বৃদ্ধি সহায়ক।
শুকনো ফল পানিতে রাখা: কিসমিস বা শুকনো আঙ্গুর পানিতে রাখলে তা ধীরে ধীরে ফুলে ওঠে, কারণ অভিস্রবণের কারণে পানি শুকনো ফলে প্রবেশ করে।
প্রাণীর রক্তকোষে পানি প্রবাহ: অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীর রক্তকোষের মধ্যে ও বাইরে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হয়, যা কোষের আকার এবং কার্যকারিতা রক্ষা করে​।

অভিস্রবণের গুরুত্ব ও ব্যবহারিক প্রভাব

অভিস্রবণ হলো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদের শিকড় থেকে পানি শোষণ হয়, যা তাদের বৃদ্ধি ও পুষ্টি নিশ্চিত করে। একইভাবে, অভিস্রবণ মানবদেহে কোষগুলোর মধ্যে পানি ও দ্রবণের ভারসাম্য বজায় রাখে। কোষের তৃপ্তি, পরিপাক, এবং রক্তকোষের মধ্যে পানি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে অভিস্রবণ আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য।

এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা অভিস্রবণের সংজ্ঞা, প্রক্রিয়া, প্রকারভেদ এবং বাস্তব জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারলাম। অভিস্রবণের প্রভাবকে আরও কার্যকরভাবে বুঝতে হলে এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিজ্ঞানের শাখাগুলোর সাথে এর সম্পর্ক বুঝতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি শুধু বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।