মোটা হওয়ার উপায়
-6796223f11398.jpg)
Admin
January 26, 2025
110
মোটা হলে যেমন নিজের কাছে অস্বস্তি লাগে, তেমনি অতিরিক্ত চিকন হলেও দেখতে বেমামান লাগে। অনেকেই আছে যারা মোটা হতে অনেক কিছুই ট্রাই করে থাকেন কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই কোন উপকার পাচ্ছেন না। বয়স আর উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হওয়া বা আন্ডারওয়েট হওয়া কিন্তু খুবই সমস্যার ব্যাপার। তাই আজকে আমরা আপনাদের জানাবো মোটা হওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে, কার্যকরী টিপস জেনে থাকুন ফিট ও হেলদি।
চলুন জেনে নেই মোটা হওয়ার সহজ উপায়গুলো
ব্যায়াম করা
অনেকেই ভেবে থাকেন ওজন কমাতেই ব্যায়াম প্রয়োজন, কিন্তু এই ধারণা মোটেও ঠিক না। ওজন কমাতে যেমন ব্যায়াম প্রয়োজন ঠিক তেমনি ওজন বাড়াতেও ব্যায়াম করা খুবই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শুধু দৌড় ঝাঁপই যথেষ্ট না। দরকার প্রতিদিন নিয়ম করে জিম করা। জিমে অভিজ্ঞ ট্রেইনার থাকেন। আপনার ওজন এবং চেহারা দেখে তিনিই আপনাকে বলে দিবেন কোন ব্যায়াম আপনার করতে হবে।
বার বার খাবার গ্রহণ
বার বার খাবার গ্রহণ প্রতিটি মানুষেরই করা উচিৎ। প্রতি ২ ঘন্টা অন্তর অন্তর অল্প করে কিছু খেতে হবে। কিন্তু যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন তারা ২ ঘন্টা পর পর বেশি করে খেতে হবে। এসময় আপনি দুধ, দই, ফল, ছানা ইত্যাদি দিয়েই পূরণ করতে পারেন। এতে আপনার শরীরে পুষ্টির পাশাপাশি ওজনও বৃদ্ধি পাবে। এটি মোটা হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়।
খাবারে রাখুন কার্বোহাইড্রেড
মোটা হওয়ার জন্য খাবারে রাখুন কার্বোহাইড্রেড ওজন বৃদ্ধিতে কার্বোহাইড্রেড খুবই প্রয়োজন। খাবারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেড অবশ্যই রাখবেন। ভাত ও রুটি কার্বোহাইড্রেডের প্রধান উৎস। তাই প্রতিদিন অন্তত ২ বার কার্বোহাইড্রেড খাবেন। ভাত ও রুটি কার্বোহাইড্রেডের প্রধান উৎস তার মানে এই নয় যে বেশি বেশি খাবেন। আপনাকে অতিরিক্ত ফ্যাটের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই প্রতিদিন কার্বোহাইড্রেড খাবেন পরিমিত কিন্তু সাধারণের তুলনায় কিছুটা বেশি। মোটা হওয়ার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
বেশি ক্যালোরি গ্রহন
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমরা বেশি ক্যালোরি বার্ন করি এবং কম ক্যালোরি গ্রহণ করি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে উলটা হবে যতটুকু ক্যালোরি বার্ন করবেন তার দ্বিগুণ ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। ওজন বৃদ্ধির জন্য শরীরের চাহিদার তুলনায় বেশি ক্যালোরি নিন। ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করতে চাইলে দিনে ৬০০-৭০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করতে হবে আর যদি ওজন আস্তে আস্তে বাড়াতে চান তাহলে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করতে হবে। এভাবে এক সপ্তাহ করলেই আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে।
সঠিক প্রোটিন গ্রহণ
ওজন বৃদ্ধি করতে শুধুমাত্র ক্যালোরিই যথেষ্ট না। ক্যালোরির পাশাপাশি সঠিক প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। সঠিক প্রোটিন গ্রহন না করলে ক্যালোরি বাড়তি ফ্যাটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, ডাল ও দুধ অবশ্যই রাখবেন।
ড্রাই ফ্রুটস খাবেন
মোটা হওয়ার জন্য ড্রাই ফ্রুটস খাবেন ড্রাই ফ্রুটসে আছে প্রচুর ক্যালোরি ও ফ্যাট যা ওজন বৃদ্ধিতে অনেক কাজে দিবে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই ২টি কাজু ও ২টি কিসমিস খাবেন। এইটা কোনভাবেই ভুলবেন না। আর সকালের নাস্তায় রাখুন আমন্ড বা পেস্তা। ওজন বৃদ্ধিতে আপনার ডায়েট চার্টে বাদামের পরিমাণ বেশি রাখুন। এভাবে নিয়ম মেনে ড্রাই ফ্রুটস খেলে দেখবেন এক মাসের মধ্যেই আপনার ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টেনশনমুক্ত থাকুন
সব সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে টেনশন। ওজন বৃদ্ধিতে যেমন টেনশনমুক্ত থাকা প্রয়োজন ঠিক তেমনি ওজন কমাতেও টেনশনমুক্ত থাকা খুবই আবশ্যক। আজকাল টেনশনমুক্ত থাকা খুবই কঠিন তাও চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব টেনশনমুক্ত থাকার।
পরিমিত ঘুমান
শরীর ঠিক রাখতে ঘুম খুবই প্রয়োজন। প্রতিদিন ৮ ঘন্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে। এর থেকে কম হওয়া যাবে না। এছাড়া ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন নিয়ম করে ইয়োগা বা যোগাসন করুন। এতে আপনার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
ঘুমানোর আগে দুধ মধু খান
ঘুমোতে যাওয়ার আগে এমন কিছু খেতে পারেন যা বেশ পুষ্টিকর এবং ক্যালোরিযুক্ত। কারণ সেটা ঘুমিয়ে পরছেন বলে খরচ হচ্ছে না এবং পুরো রাত আপনার শরীরে ক্যালোরির কাজ করবে এবং ওজন বৃদ্ধি করবে। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দুধ ও মধু মিশিয়ে খান। এটি ওজন বৃদ্ধিতে পরীক্ষিত এবং মোটা হওয়ার সহজ উপায়।
ডায়েটে চকলেট এবং চিজ রাখুন
সচরাচর বাহিরের খাবার খেতে আমরা নিষেধ করে থাকি। কিন্তু ওজন বৃদ্ধিতে বাহিরের খাবার যেমন আইসক্রিম, পেস্ট্রি, বার্গার ইত্যাদি খাবার খুবই কার্যকরী। এতে ফ্যাট থাকে, বেশি খেলে শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর! তাই আপনি চাইলে এগুলো খেতে পারেন কিন্তু তা হবে পরিমাণমতো। আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে চকলেট এবং চিজ রাখতে পারেন।
ওজন বৃদ্ধি, হ্রাস অথবা শারীরিক যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই পানি খুব উপকারী। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নিয়ম করে এই মোটা হওয়ার সহজ উপায় লক্ষ্য করলেই আপনি ওজন বৃদ্ধি করে পাবেন সুন্দর স্বাস্থ্য। নিজের যত্ন নিন ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন।
ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়
ইসলামে সুস্থ জীবনযাপন ও শরীরের যত্ন নেওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শরীর ও স্বাস্থ্য আল্লাহ্র দেওয়া একটি আমানত এবং আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই আমানতের যথাযথ যত্ন নেওয়া। বর্তমান সময়ে, অনেক মানুষ স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, বিশেষত যারা পাতলা বা কম ওজনের কারণে শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করেন। তবে, ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয় বরং ধর্মীয় নীতিমালা মেনে চলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আলোচনায় আমরা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সুস্থভাবে মোটা হওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাস্থ্য ও শারীরিক যত্ন
ইসলামে শরীরকে সুস্থ রাখা এবং যত্ন নেওয়া একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়। কুরআন এবং হাদিসে স্বাস্থ্য ও শরীরের যত্ন নেওয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তোমার শরীরের উপর তোমার অধিকার রয়েছে।” (সহীহ মুসলিম)। এর অর্থ হলো, আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখার জন্য যথাযথ যত্ন নেওয়া উচিত যা ধর্মীয় এবং পার্থিব উভয় কাজেই সহায়ক হবে।
সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং সুষম খাবারের গুরুত্ব
ইসলামে খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এটি মানব দেহের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবার শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে থাকে এবং স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।
কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন: “তোমরা যা পবিত্র এবং ভালো, তা খাও” (সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৬৮)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে শুধু হালাল খাবার নয়, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাংসের উপকারিতা
মাংস প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা পেশী বৃদ্ধিতে সহায়ক। ইসলামে হালাল মাংস খাওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রোটিন-সমৃদ্ধ হালাল মাংস যেমন মুরগি, গরু বা খাসির মাংস খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
ফল ও সবজির গুরুত্ব
ফল ও সবজি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা অপরিহার্য। তারা ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সরবরাহ করে, যা শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে ফল ও সবজি খাওয়ার গুরুত্বের উল্লেখ রয়েছে।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “খেজুর এবং পানি দিয়ে রোজা ভাঙো, কারণ এতে বরকত রয়েছে।” (তিরমিজি)। খেজুর শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং পুষ্টিকর হওয়ায় শরীরের ওজন বাড়াতে সহায়ক।
দানা জাতীয় খাদ্য
দানা জাতীয় খাদ্য যেমন ওটস, বাদাম, এবং ফ্লেক্সসিড শরীরের জন্য অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। এসব খাদ্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিনের উৎস, যা শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তিশালী ও সুস্থ রাখে।
খাবারের পরিমাণ ও সময় নির্ধারণ করুন
ইসলামে খাবারের পরিমাণ ও সময় নিয়ন্ত্রণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে: “তোমরা খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না”
স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের ভূমিকা
মাঝে মাঝে বাদাম, ফলের রস বা দই স্ন্যাকস হিসেবে গ্রহণ করুন। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ক্যালোরি সরবরাহ হবে, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক। ইসলামে স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যা শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে।
অতিরিক্ত খাবার পরিহার করুন
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। ইসলামে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “মানুষের শরীরে বেঁচে থাকার জন্য অল্প পরিমাণ খাবারই যথেষ্ট।” (তিরমিজি)। অতিরিক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
উপসংহার
ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় হলো কিছু প্রাকৃতিক ও ধর্মীয় উপায় অনুসরণ করা যায়। সুষম খাবার, নিয়মিত খাবার গ্রহণ, হালাল খাদ্য নির্বাচন, শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত পানি পান এবং সঠিক বিশ্রাম—এসব অনুশীলন করলে আপনি সুস্থভাবে মোটা হতে পারবেন এবং ইসলামী নীতিমালা মেনে চলতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায় ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং শরীরের যত্ন নেওয়া সম্ভব।
আপনার যেকোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আমাদের ব্লগ অনুসরণ করতে থাকুন আরও স্বাস্থ্যকর টিপস এবং ইসলামিক পরামর্শের জন্য।