মেট্রোরেল রচনা

মেট্রোরেল রচনা
Admin February 03, 2025 135
বিশাল জনসংখ্যার চাপে ঢাকার পথ ও পরিবহন আজ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। তার ক্রমবর্ধমান লোকসংখ্যার কথা ভেবে যদি নতুন নতুন রাস্তা নির্মিত না হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর পরিবহনব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে তার পথ ও পরিবহনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। এই সমস্যা কমিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ একটি মেগা প্রকল্প ‘ঢাকা মেট্রোরেল’। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার বর্তমান লোকসংখ্যা দেড় কোটির বেশি। ফলে যানজট লেগেই থাকে। ঢাকায় এই ভয়াবহ যানজট ও ট্রাফিক সমস্যা দূর করার জন্য বর্তমান সরকারের মেট্রোরেল প্রকল্প সময়োচিত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ঢাকা মহানগরের যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং পরিবহন-সংকট নিরসনে মেট্রোরেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মেট্রোরেল রচনা

মেট্রোপলিটন রেল-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেট্রোরেল । মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো স্পর্শ করে গণপরিবহনের জন্য প্রতিষ্ঠিত রেলব্যবস্থাই মেট্রোরেল। এটি একটি বিদ্যুৎচালিত পরিবহন। ঢাকা মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রকল্পটির নাম 'ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিড'। এটি একটি দ্রুতগামী, স্বাচ্ছ্যন্দময়, সুবিধাজনক ও নিরাপদ নগরকেন্দ্রিক রেলব্যবস্থা।

রাজধানীর যানজট নিরসন এবং স্বস্তিদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের l কাজ দ্রুত বেগে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে স্বল্প সময়ে মতিঝিলে পৌঁছা যাবে। উত্তরা থেকে শুরু হয়ে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর রুট হবে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনে স্টেশন থাকবে ১৬টি। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী পরিবহন করবে প্রায় ৬০ হাজার। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এই অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পটির নয়টি টেস্ট পাইলের কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। শুরু করা হয়েছে মূল পাইলের কাজ। একই সঙ্গে কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট এলাকায় সার্ভিস লাইন সরানোর কাজও চলমান। একই প্রকল্পের মিরপুর-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও অংশে ডিভাইডার দিয়ে মূল লাইন স্থাপনের জন্য জায়গা সংরক্ষণ করা হয়েছে। রাস্তার আইল্যান্ড বরাবর এবং এর দুই পাশ থেকে জায়গা সংরক্ষণ করে মূল পাইলের কাজ শুরু হয়েছে এ অংশে। মেট্রোরেলের যাত্রী পারাপারের জন্য রেলকোচ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে জাপানে শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন-৬ এর পুরো কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ ৩ ও ৪-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উড়ালপথ ও নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পরে এই উড়ালপথের ওপরই ট্রেনের জন্য লাইন বসানো হবে। এ প্যাকেজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেট্রোরেল চালু হলে প্রতিদিন কয়েক লাখ যাত্রী স্বস্তিদায়ক অবস্থায় চলাচল করতে পারবে। এর ফলে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। মেট্রোরেলে বিভিন্ন রুটে সাশ্রয়ী খরচে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হলে প্রাইভেটকার এবং অন্যান্য যানবাহনে করে চলাচল করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করাকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ায় আশা করা হচ্ছে তা একটি ভালো নজির বলে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।