মালয়েশিয়া ভিসা চেক

মালয়েশিয়া ভিসা চেক
Admin February 02, 2025 121

বাংলাদেশে থেকে বিদেশগামী ব্যক্তিদের নিকট অন্যতম একটি পছন্দনীয় গন্তব্য হলো মালেশিয়া। বাংলাদেশ সেসব দেশে শ্রম শক্তি রপ্তানির করে সেগুলো প্রথম ৫টির মধ্যে মালেশিয়ার অবস্থান। বর্তমানে মালেশিয়ায় প্রায় ১০ লক্ষ প্রবাসী অবস্থান করে। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত বিশাল সংখ্যক লোক মালেশিয়াই যাচ্ছে এবং অনেকে যাওয়ার প্রক্রিয়া মধ্যে রয়েছে। বিগত কয়েক বছর থেকে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি একটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে মালেশিয়ার ভিসা। যার প্রেক্ষিতে এই আলোচনায় আমরা মালেশিয়ার ভিসা এবং অনলাইনে মালয়েশিয়া ভিসা চেক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা যায়৷ 

মালয়েশিয়া ভিসা চেক

আপনি যদি বাংলাদেশের কোন এজেন্সি বা দালালকে মালেশিয়ার ভিসা করতে দেন বা অনেক দিন হয়ে গেছে দালাল আপনার পাসপোর্ট নিয়ে রেখেছে এখন আপনি আপনার পাসপোর্টে ভিসা অনুমোদ হয়েছে কিনা দেখতে চান কিংবা আপনি মালেশিয়ায় অবস্থান করছেন, আপনার ভিসার মেয়াদ আর কতদিন আছে সেটি দেখতে চান তাহলে বেশ কয়েকটি উপায়া আপনি আপনার ভিসাটি চেক করতে পারবেন। এগুলো হলো :

পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক

এই নিয়মে ভিসা চেক করার জন্য শুধু মাত্র পাসপোর্ট নাম্বারই যথেষ্ট। যদি আপনার কাছে পাসপোর্ট নাম্বারটি থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই মালেশিয়ার ভিসা চেক করতে পারবেন। এর জন্য প্রথমে আপনাকে আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের যে কোন একটি ব্রাউজার ওপেন করতে হবে। তারপর সেখানে Malaysia Visa and Pass Status লিখে সার্চ দিতে হবে। এরপর সর্বপ্রথম

(MyIMMs-e-Services) লেখা যুক্ত যে সাইটটি আসবে তার উপর ক্লিক করতে হবে। একটু অপেক্ষা করার পর আপনার সামনে মালেশিয়ার ভিসা চেক করার ওয়েবসাইটটি ওপেন হবে। 

আপনি এইসব ঝামেলা এড়াতে চাইলে সরাসরি https://eservices.imi.gov.my/myimms/VPAStsInq এ ক্লিক করে মালেশিয়ার ভিসা চেক করার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট প্রবেশ করতে পারবেন। তারপর বাদিকের লাল স্টার দেওয়া বক্স গুলো থেকে Document No বক্সে আপনার পাসপোর্ট নাম্বারটি দিতে হবে এবং Country Issue থেকে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে SEARCH বাটনে ক্লিক করতে হবে। SEARCH বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথেই আপনার নাম, দেশ, ভিসা ইস্যুর তারিখ, ভিসার মেয়াদ, বর্তমান স্ট্যাটাস সহ যাবতীয় তথ্য নিচে প্রদর্শিত হবে।

মালেশিয়ার ই-ভিসা চেক

এই নিয়মে ভিসা চেক করার জন্য আপনার নাম্বার এবং স্টিকার নাম্বার প্রয়োজন হবে। এই নিয়মে ভিসা চেক করার জন্য আগের নিয়মেই আপনাকে আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের যে কোন একটি ব্রাউজার ওপেন করে গুগলে প্রবেশ করতে হবে। তারপর গুগলের সার্চ বক্সে Malaysia Visa Check লিখে সার্চ দিতে হবে। এরপর প্রথম যে সাইটটি আসবে সেখানে প্রবেশ করতে হবে ।

অথবা আপনি সরাসরি এই লিংকে https://malaysiavisa.imi.gov.my/evisa/vlno_checkstatus.jsp এ ক্লিক করে মালেশিয়ার ই-ভিসা চেক করার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট প্রবেশ করতে পারবেন। এরপর Passport Number বক্সে আপনার পাসপোর্ট নাম্বারট, Sticker Number বক্সে স্টিকার নাম্বার এবং Answer বক্সে ক্যাপচা কোড এবং I have obtained my EVISA তে টিক মার্ক দিয়ে CHECK বাটনে ক্লিক করতে হবে। CHECK বাটনে ক্লিক করার পর নিচে পাসপোর্ট নাম্বার, আপ্লিকেশন স্টেটাস, ভিসা ইস্যুর স্থান, বর্তমান স্ট্যাটাস সহ যাবতীয় তথ্য চলে আসবে।

এখন আপনি ভাবছেন স্টিকার নাম্বার কোথায় পাবেন? চিন্তার কোন কারণ নেই এজেন্সি থেকে আপনাকে যে ই-ভিসার কপিটি দেওয়া হবে সেখানেই Sticker Number টি পেয়ে যাবেন।

মালেশিয়ান ভিসা

বাংলাদেশ থেকে সাধারণ তিন ধরনে ভিসায় মালেশিয়া যাওয়া যায়,

১। টুরিস্ট ভিসা

২। স্টুডেন্ট ভিসা

৩। কলিং ভিসা।

টুরিস্ট ভিসা

মালেশিয়ায় সাধারণ ভ্রমন, ব্যবসায়ীক কার্যক্রম, চিকিৎসা কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে সল্প সময় অবস্থানের জন্য যে ভিসাটি ইস্যু করা হয় সেটি হলো টুরিস্ট ভিসা। আপনার যদি উল্লেখিত কোন প্রয়োজনে মালেশিয়া যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাকে টুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে মালেশিয়ায় যেতে হবে। তবে এই ভিসা ব্যবহার করে আপনি মালেশিয়ায় কাজ করতে যেতে পারবেন না। এই ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। সাধারণত, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য মালেশিয়া ভ্রমনে ক্ষেত্রে Single Entry Tourist Visa ইস্যু করা হয়। যা মালেশিয়া প্রবেশের পর থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত বৈধ থাকে। অর্থাৎ এই ভিসার মেয়াদ হচ্ছে ৩০ দিন। এবং ৩০ দিন অতিক্রম হয়ে গেলে আপনি সেখানে পুরোপুরি অবৈধ হয়ে যাবে। 

যেহেতু টুরিস্ট ভিসা একটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য ইস্যু করা হয় তাই এই ভিসার আবেদনের সময় আপনাকে বেশ কিছু জিনিস নিশ্চিত করতে হয়। সেগুলো হলো মালেশিয়ায় থাকার জন্য হোটেল রিজার্ভেশন, যাওয়া আসার ফ্লাইট টিকিট এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট। 

বর্তমানে মালেশিয়ার ভিসা সিস্টেম ই ভিসায় শিফট করেছে যার ফলে টুরিস্ট ভিসা আবেদনটি অনলাইনের মাধ্যমে করতে হবে। মালেশিয়া সরকার Visa সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে টুরিস্ট ভিসা আবেদন গ্রহণ করে। যার কারণে দ্রুত এবং সহজে টুরিস্ট ভিসার অনুমোদ পাওয়া যায়। তবে সাধারনত আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর ৭-১৫ কার্যদিবসের মধ্যেই টুরিস্ট ভিসার অনুমোদন পাওয়া যায়। টুরিস্ট ভিসার অনুমোদন পাওয়ার পর আপনি এই ভিসায় একবার মালেশিয়ায় প্রবেশ করলে ২৯ দিন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। তবে মাথায় রাখবেন টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আপনাকে দেশে ফিরে আসতে হবে।

স্টুডেন্ট ভিসা

মালেশিয়া যাওয়ার সবচেয়ে সহজ ভিসা হলো স্টুডেন্ট ভিসা। তবে এর জন্য অবশ্যই আপনাকে মালেশিয়ার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে মালেশিয়ার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা হলো উচ্চমাধ্যমিক পাস। যদি মালেশিয়ার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বয়সের কোন লিমিট নেই তবে শিক্ষা গ্যাপ ১০ বছরের বেশি হওয়া যাবে না। 

মালেশিয়ায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই কেবল আপনি স্টুডেন্ট ভিসার (Student Pass) জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং এই ভিসার আবেদন করার সময় আপনাকে মালেশিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত Offer Letter বা ভর্তি পত্র সংগ্রহ করতে হবে। এবং অফার লেটার সহ মালেশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের ই ভিসার মধ্যমে আবেদন করতে হবে। 

এছাড়াও আবেদনের সময় আপনাকে পাসপোর্ট, ভর্তি প্রমাণ পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত এক বছরের জন্য হয়ে থাকে। তবে শিক্ষার্থীর পঠিত কোর্সের মেয়াদের সাথে সঙ্গতি রেখে ভিসার মেদায় শেষ হয়ে গেলে মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করা যাবে। 

এই ভিসা মাধ্যমে আপনি মালেশিয়ায় থাকতে এবং সেখানের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পারেন। পাশাপাশি, মালেশিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার নির্দিষ্ট শর্তে কাজের অনুমতি part-time job করতে পারবে। এই ভিসার আর একটি সুবিধা হলো এই ভিসায় মালেশিয়া গেলে পাসপোর্ট আপনার কাছেই থাকবে। যার ফলে আপনি নিজের খুশি মত যেকোন জায়গায় যেতে পারবেন।

কলিং ভিসা

মালেশিয়ায় অফিশিয়াল ভাবে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য যে ভিসা অনুমোদন করা হয় সেটিই মূলত কলিং ভিসা। মালেশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক বেদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের যখন নতুন কর্মীর প্রয়োজন হয় তখন তারা মালেশিয়ান সরকারের নিকট তাদের চাহিদাপত্র প্রেরণ করে। সেই চাহিদার উপর ভিত্তি করে মালেশিয়ার সরকার সেই পরিমান ভিসা বিভিন্ন দেশের জন্য ইস্যু করে থাকে। তবে বিগত কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশীদের জন্য কলিং ভিসার অনুমোদনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই চাইলেও সকলে এখন মালেশিয়ায় যেতে পারছে না। 

মালেশিয়ার কলিং ভিসা সাধারণ ৩ বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পুনরায় এই ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায়। এই ভিসার একটি অন্যতম অসুবিধা হলো এই ভিসায় মালেশিয়া গিয়ে নিজের স্বাধীনতা মত কাজ করা যায় না। কলিং ভিসার মাধ্যমে আপনি যে কোম্পানিতে যাবেন আপনাকে সেখানেই কাজ করতে হবে। এর বাহিরে অন্য কোথাও কাজ করার সুযোগ নেই। কারণ এই ভিসায় মালেশিয়া যাওয়ার সাথে সাথে তারা আপনার পাসপোর্টটি নিয়ে নিবে। যার ফলে আপনার চলাচল অটোমেটিক সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।

শেষ কথা

বিগত সরকারের আমলে মালেশিয়া যাওয়ার প্রক্রিয়া পুরো সিন্ডিকেটের আন্ডারে চলে যায়৷ এবং মালেশিয়ায় শ্রম শক্তি রপ্তানির গতি প্রায় স্থবির হয়ে যায়। যার ফলে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী মালেশিয়া যাওয়ার মনস্থির করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। তবে খুশির খবর হলো বর্তমান সরকার মালেশিয়ার ভিসা প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন। যার ফলে আশা করা যায় অতি দ্রুত মালেশিয়া ভিসা সমস্যার সমাধান হবে। যার প্রেক্ষিতে এই আলোচনায় আমরা অনলাইনে মালয়েশিয়া ভিসা চেক নিয়ে আলোচনা করলাম৷