মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
Admin February 17, 2024 136

আসলামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক গণ আজ আমি আলোচনা করবো মাধবকুন্ড জলপ্রপাত (Madhabkunda Waterfall) নিয়ে,মাধবকুন্ড জলপ্রপাত কোথায় অবস্থিত ও কি কি নিদর্শন আছে তা তুলে ধরবো। চলুন জেনে নিয়ে যাক..

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত (Madhabkunda Waterfall):

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের জলপ্রপাতপ্রেমী পর্যটকদের একমাত্র আকর্ষণ ছিল মাধবকুণ্ড। বর্তমানে বাংলাদেশে আরও বেশ কয়েকটি ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে পর্যটকদের কাছে মাধবকুণ্ড ঝর্ণার আবেদন একটুও কমেনি। এখানে সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিশ্রামাগার ও রেস্তোরাঁ এবং ২০০১ সালে ২৬৭ একর জায়গা নিয়ে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের প্রধান ফটক থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার হাঁটলেই চোখে পড়বে মাধবকুণ্ড ঝর্ণা। অসম্ভব সুন্দর এই জলপ্রপাতটি প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু।

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কাছে পরিকুণ্ড নামে আরও একটি ঝর্ণা রয়েছে। ঝর্ণার স্রোত বরাবর ১০-১৫ মিনিট হেঁটে গেলে পৌঁছানো যায়। মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ঘুরে বেশ উপভোগ্য। সারাদিন এখানে কাটানোর সুযোগ আছে। ইকোপার্কে শ্রী শ্রী মাধেবেশ্বরের মাজার, চা বাগান, খাসিয়া বাগান, কমলালেবু, লেবু, সুপারি এবং সুপারির বাগান রয়েছে। কোথাও জুম চাষও দেখতে পাবেন। চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত সংলগ্ন পুকুরে হিন্দুদের বারুণী স্নান অনুষ্ঠিত হয় এবং এখানেও মেলার আয়োজন করা হয়। মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে প্রবেশ টিকিট জনপ্রতি ১০ টাকা।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত কোথায় অবস্থিত:

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এর ইতিহাস:

পাথারিয়া পাহাড় (পূর্বে: অ্যাডাম আইল হিল) শক্ত শিলা নিয়ে গঠিত; এই পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে গেছে গঙ্গামারা। এই ছড়া মাধবকুণ্ডের পতন ঘটে মাধবচারের কাছে। অর্থাৎ, গঙ্গামারায় প্রবাহিত জলধারা [১২ অক্টোবর ১৯৯৯-এর হিসাব অনুযায়ী] প্রায় ১৬২ ফুট উচ্চতা থেকে নেমে এসে আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়। সাধারণত একটি মূল স্রোতে পানি প্রবাহিত হয়, বর্ষা এলে মূল স্রোতের পাশে আরেকটি ছোট স্রোতধারা তৈরি হয় এবং পূর্ণ বর্ষায় উভয় ধারা পানির তীব্র বিস্ফোরণে এক স্রোতে মিশে যায়। এই বিশাল পানির স্রোত পড়ার সাথে সাথে নিচে একটি বড় জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। এই মাধবচারার জল পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে হাকালুকি হাওয়ারে মিলিত হয়েছে।

দীঘির ডান পাশে পাথরের উপর তৈরি হয়েছে একটি গুহা, যার স্থানীয় নাম কাব। এই শাবকটি দেখতে শেডের মতো। মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী তিথিতে স্নানকারীরা কাবের নীচে দাঁড়িয়ে তাদের ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে।

মাধবকুন্ড ইকোপার্ক যাবার উপায় হলো:

নানাভাবে মাধবকুণ্ড ঝর্ণা যাওয়া যায়। আপনি কোথায় থাকেন তার উপর নির্ভর করে মাধবকুণ্ড যাওয়ার কয়েকটি উপায় রয়েছে:

ঢাকা থেকে মাধবকুণ্ড:

ঢাকা থেকে বাসে করে বাসে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো শ্যামলী পরিবহন থেকে বিয়ানীবাজার বা এনা পরিবহনের দিকে যাওয়া এবং সোজা কাঁঠালতলী বাজারে নেমে যাওয়া। সেখান থেকে মাধবকুণ্ড থেকে রিজার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) ভাড়া নিতে পারেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন মৌলভীবাজার হয়ে সিলেট যায়। পারাবত, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে (শ্রেণিভেদে ভাড়া ২৮০-৬৩৯ টাকা, সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা)। কুলাউড়া স্টেশন থেকে কাঁঠালতলী বাজার হয়ে যাদবকুণ্ড যেতে হবে। এক্ষেত্রে রিজার্ভ সিএনজি (৪০০-৬০০) নিয়ে মাধবকুণ্ড যেতে পারেন অথবা লোকাল সিএনজিতে করে কুলাউড়া থেকে কাথালাতলী বাজার যেতে পারেন এবং সেখান থেকে মাধবকুন্ড থেকে রিজার্ভ সিএনজি (১৫০-১৮০) বা লোকাল সিএনজি (জনপ্রতি ২০-২৫) ভাড়া করে নিতে পারেন।

মৌলভীবাজার থেকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক:

মৌলভীবাজার শহর থেকে মাধবকুণ্ড যেতে চাইলে যেতে হবে দুটো পথ। হয় সিএনজি/জিপ/মাইক্রোবাস রিজার্ভ করতে হবে। অথবা বড়লেখাগামী লোকাল বাসে উঠে কুলাউড়া পার হয়ে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলী বাজারে নেমে পড়ুন। সেখান থেকে রিজার্ভ/লোকাল সিএনজি নিয়ে মাধবকুণ্ড যাওয়া যায়।

সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড:

সিলেট থেকে মাধবকুণ্ড যেতে চাইলে কদমাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বড়লেখা হয়ে কুলাউড়াগামী বাসে চড়তে পারেন অথবা বড়লেখা চলে আসবেন। বড়লেখা থেকে রিজার্ভ করে সিএনজি করে মাধবকুণ্ড যেতে পারেন অথবা বড়লেখা থেকে লোকাল সিএনজি নিয়ে কাঁঠালতলী বাজারে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে রিজার্ভ/লোকাল সিএনজিতে করে মাধবকুণ্ড যেতে পারেন।

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুণ্ড:

শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবকুণ্ড যেতে চাইলে সরাসরি সিএনজি/জীপ রিজার্ভ করে রাখতে পারেন। অথবা বড়লেখাগামী লোকাল বাসে উঠে বড়লেখার আগে কাঁঠালতলী বাজারে নেমে পড়ুন। সেখান থেকে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে রিজার্ভ/লোকাল সিএনজি।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত গিয়ে কোথায় থাকবেন:

মাধবকুণ্ডে থাকার জন্য জেলা পরিষদের ২টি বাংলো ও ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। অগ্রিম বুকিং দিয়ে সেখানে থাকতে পারবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সিলেট, মৌলভীবাজার বা শ্রীমঙ্গলে রাত কাটান কারণ এটি আপনার পরের দিন যে কোনও জায়গায় ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলবে। আর সেসব জায়গায় থাকার অনেক ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দের হোটেল বা কটেজে থাকতে পারেন।

মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা:

  • কম খরচে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে ভ্রমণ করতে চাইলে ট্রেন ও লোকাল সিএনজিতে ভ্রমণ করতে পারেন।
  • খরচ কমানোর জন্য আপনি গ্রুপে ভ্রমণ করতে পারেন, সদস্য সংখ্যা সিএনজিতে বসবেন এমন লোকের সংখ্যা অনুযায়ী হওয়া উচিত।
  • আগের রাতটা ছেড়ে পুরো দিনের ট্যুরে একদিনেই মাধবকুন্ড ঘুরে আসা সম্ভব এবং রাতে গন্তব্যে ফিরে আসা যেতে যান।
  • স্থানীয় ভ্রমণের জন্য দর কষাকষির ভাড়া। পর্যটকরা বাড়তি টাকা দাবি করেন।
  • সিজন-ছুটির দিনে সিএনজি/জিপের ভাড়া একটু বেশি পড়বে।
  • বর্ষা মৌসুমে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখা যায়।
  • ঝর্ণার চারপাশের পাথরগুলো খুবই পিচ্ছিল, হাঁটার সময় সাবধানে চলতে হবে।
  • নোটিশ বোর্ডে যা লেখা আছে তা অনুসরণ করুন।
  • জলপ্রপাতের খুব গভীরে, সেখানে যেতে ভুলবেন না।
  • বর্ষায় প্রচুর জল থাকে তাই ঝিরিতে অনেক স্লথ থাকে, সাবধান।
  • ঝর্ণার পানিতে গোসলের আগে অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে নিন।
  • যে কোনও বিষয়ে স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিন।

অবশেষে:

আশা করি আপনার ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত (Madhabkunda Waterfall) দেখতে আসবেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পুরো লেখাটি  ধর্য্যসহ কারে পড়ার জন্য।