ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি

Admin
December 02, 2024
251
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, শাসন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে অর্পণ করা যাতে এক বিভাগ অন্য বিভাগের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের এই ধারণা প্রাচীনকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নিকটও পরিচিত ছিল।
ভূমিকাঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলাে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়ােগ করা। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রবর্তন করেন। তবে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্বে এ নীতি রাজনৈতিক আলােচনাকে প্রাধান্য লাভ করে নি। আধুনিককালে মন্টেস্কু এ নীতির ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি
সাধারণভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের শাসন আইন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে ন্যস্ত করা এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ না করা। অর্থাৎ যখন। সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়, তখন একে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলা হয়।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো
সরকারের তিনটি বিভাগ যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। সরকারে এই তিনটি বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে । আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করে, শাসন বিভাগ আইন মেনে শাসন পরিচালনা করে এবং বিচার বিভাগ আইন অমান্য কারীদের বিচার করে থাকে। সরকারের এই তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণনীতি বলে। অর্থাৎ স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল সরকারের এই তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবেনা।
ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতি আজকের নতুন কোন বিষয় নয়, এই ধারণা প্রাচীন রাষ্ট্রবিঞ্জানীদের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছিল। যেমন অ্যারিস্টটল , সিসেরা প্রমুখ রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের চিন্তা ভাবনায় ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতির উল্লেখ পাওয়া যায়। তাছাড়া মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগেও এর সমর্থন পাওয়া যায়।
আধুনিক কালে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতি মূল প্রবক্তা হলেন ফরাসি দার্শনিক মন্তেস্কু। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ তে সর্ব প্রথম ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণনীতির আধুনিক ব্যাখ্যা দেন। মন্তেস্কুর মতে ,সরকারের তিনটি বিভাগের পৃথক পৃথক কাজ থাকা উচিৎ। তা না হলে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে। তাই সরকারের প্রত্যেক বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করা দরকার। তা না হলে ব্যক্তির স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে না।