কৃষি শিক্ষা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

Admin
December 01, 2024
297
কৃষি শিক্ষা কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক। কৃষি শিক্ষার মাধ্যমে নতুন কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত ফসল চাষ, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কৌশল শেখানো হয়। এছাড়াও, এটি কৃষি ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং কৃষি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তৈরি করে, যা দেশের অর্থনীতি উন্নত করতে সহায়ক। কৃষি শিক্ষার মাধ্যমে যুবকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
সৃজনশীল-১
মেহেরুন্নেসা এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। নবীনবরণ শেষে তিনি বান্ধবীদের সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে এলেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। সেখানে দেখেনÑ এক হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার এক ভাস্কর্য। নামÑ সংশপ্তক। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে সম্মুখপানে এগিয়ে যায় তাকেই বলে সংশপ্তক। ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে এ ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে। মনটা ভরে গেল মেহেরুন্নেসার।
ক. মুস্তাফা মনোয়ার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলেই মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়।’Ñকথাটি বুঝিয়ে লিখ।
গ. ক্যাম্পাসে মেহেরুন্নেসা শিল্পকলার কোন দিকটি দেখেছেন? এর বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটিই শিল্পকলার প্রধান দিক।’Ñমন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
উত্তর-১
ক. মুস্তাফা মনোয়ার ঝিনাইদহ জেলার মনোহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. শিল্পকলার নানা দিক প্রবন্ধটিতে শিল্পের প্রয়োজন ও অপ্রয়োজন দুটোই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ দুটো মিলেই সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা রকম জিনিসের প্রয়োজন হয়। সেসব জিনিসের প্রয়োজন মেটালেই আমরা খুশি হই না।
আমাদের মনের চাহিদার জন্য জিনিসটি সুন্দর হিসেবেও আমরা পেতে চাই। অর্থাৎ প্রয়োজনের জিনিসটি সুন্দর হতে হবে। সামান্য কাঁথা যেটি আমরা ব্যবহার করে থাকি, তা যদি নানা রকম নকশা তুলে নকশিকাঁথায় রূপান্তর করা হয় তখন এর সৌন্দর্যের দিকেই আমরা বেশি মনোযোগী হই, প্রয়োজনের কথা মনেই থাকে না। প্রয়োজন শরীরকে তৃপ্ত করে, আর বাইরের জিনিস তৃপ্ত করে মনকে। এভাবেই প্রয়োজন আর অপ্রয়োজন মিলে মানুষের সৌন্দর্যের আশা পূর্ণ হয়।
গ.উদ্দীপকে উল্লিখিত মেহেরুন্নেসা নবীনবরণ শেষে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আসেন। সেখানে তিনি সংশপ্তক নামের একটি ভাস্কর্য দেখেন। ‘শিল্পকলার নানা দিক’ প্রবন্ধে মুস্তাফা মনোয়ার শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা সব কিছুর মধ্য দিয়েই সুন্দরকে প্রকাশ করা হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত মেহেরুন্নেসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন ছাত্রী। তিনি নবীনবরণ শেষে বান্ধবীদের সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একটি ভাস্কর্য দেখতে পান। ভাস্কর্যটির নাম সংশপ্তক। সংশপ্তক অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে সংশপ্তক নির্মিত হয়। মুস্তাফা মনোয়ার শিল্পকলার নানা দিক প্রবন্ধে এ ধরনের ভাস্কর্যের কথা বলেছেন। শিল্পকলার এ মাধ্যমটি বহু পুরনো। ভাস্কর্যে একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে তুলে ধরা হয়। এগুলো থেকে ভাবীকালের মানুষ তাদের অতীত ঐতিহ্যের শৌর্যবীর্য ও উন্নতির সাথে মিলিয়ে দেখতে পারে।
ঘ.মেহেরুন্নেসার দেখা দিকটিই শিল্পকলার প্রধান দিকÑ মন্তব্যটি যথার্থ। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে নির্মিত ভাস্কর্য ‘সংশপ্তক’ দেখেছেন মেহেরুন্নেসা।
উদ্দীপকে মেহেরুন্নেসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক লাইব্রেরির সামনে ভাস্কর্যটি দেখেন। সেটি ১৯৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে বানানো হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘সংশপ্তক’। এর মানে হচ্ছেÑ নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়।
ভাস্কর্য শিল্পকলার একটি প্রধান দিক। ভাস্কর্য হচ্ছে নরম মাটি দিয়ে কোনো কিছুর রূপ দেয়া বা শক্ত পাথর কেটে কোনো গড়ন বানানো। বিশেষ এক ধরনের ছাঁচ বানিয়ে গলিত মেটাল ঢেলে গড়ন বানানো, এ ধরনের কাজকে বলে ভাস্কর্য। আমাদের দেশে পোড়ামাটির ভাস্কর্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল।
শিল্পকলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চিত্রকলা। চিত্রকলার মধ্যে মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-অনুভূতি, সৌন্দর্য যেভাবে ফুটে ওঠে; তা সত্যিই অসাধারণ। চিত্রকলায় শিল্পীর হাত, রঙ, তুলির সাথে মন যোগ হয়ে এক অভাবনীয় শিল্পকর্মের জন্ম দেয়। এটি আরো বেশি মনোযোগের বস্তু হয়ে ওঠে তিনি যখন কোনো ভাস্কর্য গড়েন। শিল্পীর অন্তর্দৃষ্টির সাথে তখন বাইরের দৃষ্টি যোগ হয়। অল্পক্ষণেই তিনি গড়ে তোলেন অবিকল প্রতিমা। উদ্দীপকে এ বিষয়টিরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। শিল্পকলার প্রধান দিকের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে উদ্দীপকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সংশপ্তক প্রত্যক্ষ করেন মেহেরুন্নেসা।
শিল্পকলার ইতিহাস থেকে দেখা যায় গ্রিস, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে এ শিল্পটি উঁচুমানের শিল্প হিসেবে চিহ্নিত। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতির প্রেক্ষাপটে এ দেশে ভাস্কর্য শিল্পটি মুখ্য হয়ে উঠেছে। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকৃতি, যুদ্ধযাত্রা, প্রতিবাদ চিত্র ইত্যাদি এসব ভাস্কর্যে স্থান করে নিয়েছে সম্মানের সাথে।
সৃজনশীল-২
বাগমারা উপজেলায় আয়োজিত মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে মৎস্য কর্মকর্তা মৎস্য চাষিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয় যেমন-খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর-বাঁওড় হতে মৎস্য সম্পদ হ্রাসের কারণ আলোচনা করেন। এরপর তিনি মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করেন।
ক. নিউসটন কী?
খ. পিএল টেকসইকরণ বলতে কী বোঝায়?
গ. উল্লিখিত সম্পদ হ্রাসে মৎস্য কর্মকর্তার বর্ণিত কারণসমূহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর-২
ক. নিউসটন হলো পানির উপরিভাগে ঝুলে থেকে বা ভাসমান অবস্থায় সাঁতাররত বা বিশ্রামকারী জীব।
খ. গলদা চিংড়ির পোনাকে পিএল বা Post Larvae বলা হয়।
চিংড়ির পোনা পুকুরে ছাড়ার পূর্বে জলজ পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাকে পিএল টেকসইকরণ বলে।
এ পদ্ধতিতে পোনার ব্যাগ বা পাতিলটি পুকুরে কিছুক্ষণ ভাসিয়ে রাখতে হয়। ব্যাগের ভিতরের পানি এবং পুকুরের পানি অদল- বদল করতে হয়। এভাবে দুই পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততায় সমতা আনতে হয়। পাড়ের কাছাকাছি সকালে বা বিকেলে পোনা ছাড়তে হয়।
গ.মৎস্য কর্মকর্তা বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয় হতে দিন দিন মাছ কমে যাওয়ার কারণ চাষিদের বলেন।
মানুষ জলাশয় হতে নির্বিচারে মৎস্য শিকার করায় জলাশয়গুলো মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে। দেশের অধিকাংশ নদ-নদী পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিল, হাওর-বাঁওড় ও পরিত্যক্ত ডোবাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে মাছ চাষের জায়গা হ্রাস পাচ্ছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণ সংক্রান্ত আইন কার্যকর করার শৈথিল্যের কারণে নিষিদ্ধ মৌসুমেও মাছ শিকার করা হয়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রভাবে মুক্ত জলাশয়ের মাছে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। অনেক সময় চিংড়ি মাছের পোনা সংগ্রহ করে বাছাই করার সময় অন্যান্য মাছের পোনা অবাধে মেরে ফেলা হয়।
ব্যাপক হারে ডিমওয়ালা মাছ ধরার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাছেরা তাদের বংশ বৃদ্ধির সুযোগ পায় না। ফলে মাছের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে পানি সেচের কারণে বিভিন্ন জলাশয়গুলো মাছ চাষের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমি সম্প্রসারিত হচ্ছে, ফলে মৎস্যক্ষেত্র ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। উল্লিখিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে মৎস্য সম্পদ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।
ঘ.মৎস্য কর্মকর্তা চাষিদের মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণের পরামর্শ দিলেন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আবার শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানার বর্জ্য নদীর পানিতে পড়ে দূষণ সৃষ্টি করায় মৎস্য হ্রাস পাচ্ছে। মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে তাই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জলাশয় যাতে ভরাট না হয় সে জন্য ড্রেজার দ্বারা মাটি খনন করা যাবেনা। নির্বিচারে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে পানি সেচ ও বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। নিষিদ্ধ কারেন্টজাল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ফসলের জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
অতিমাত্রায় মাছ আহরণ বন্ধ করতে হবে। যথাসম্ভব মৎস্য চাষের জলাশয়ের আয়তন বাড়াতে হবে। মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। চাষিদের ঋণের ব্যবস্থার মাধ্যমে মাছ চাষে উৎসাহিত করতে হবে। জলাশয়ে উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অক্সিজেনের স্বল্পতা দূর করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
জলাশয়ে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী দূরীকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী মাছ চাষ করতে হবে। জলাশয়ের বিভিন্ন স্থানকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। অতএব বলা যায়, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শসমূহ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।