Kobor Jiyarot

Kobor Jiyarot
Admin November 11, 2024 68
কবর জিয়ারত (Kobor Jiyarot) করলে হৃদয় বিনম্র হয়। মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। আখিরাতের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়। গুনাহ ও অন্যায় থেকে তওবা করার মানসিকতা তৈরি হয়। সৎ-আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কবর জিয়ারত রাসুল (সা.) সুন্নতও বটে।
কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো- এতে পরকালীন জীবনের কথা স্মরণ হয়। ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি ছিল না। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)

কবর জিয়ারতের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াটি তিনি পাঠ করেন তা হলো—

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

বাংলা উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’

অর্থ : হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন,

السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ

বাংলা উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)

কবর জিয়ারতের নিয়ম

কবরস্থানে সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়া। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি আদায় করা। মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।

হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েজ

কবর জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েজ আছে, জরুরী নয়। তাই এ সময় কেউ দোয়া করতে চাইলে কবরকে পেছনে বা পাশে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত উঠিয়ে দোয়া করবে। 

হাদিস শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বাকী’ কবরস্থান জিয়ারত শেষে তিনবার হাত উঠিয়ে ছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭৪) 

সহিহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ ‘আলমিনহাজে’ ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এই হাদিস দ্বারা হাত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। (আলমিনহাজ, শরহু মুসলিম, নববী ৭/৪৩)

আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন (রা.) এর দাফনের কাজ শেষ করার পর কিবলামুখী হন, এবং উভয় হাত উঠিয়ে তার জন্য দোয়া করেন যে, ইয়া আল্লাহ, আমি তার উপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। (হিলয়াতুল আউলিয়া ১/১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)

কবর জিয়ারতের ফজিলত

হাদিসে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। এমনকি দরুদ শরিফের ফজিলতের কথাও রয়েছে। তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয়, সেগুলো আদায় করা।

কবর সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করতে হবে। আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারেন, তাতে জিয়ারত হয়ে যাবে।