জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
Admin February 18, 2024 42
বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি ভাইরাল জ্বরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে ঘরের শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও। অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া লাগলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘরে বসেই জ্বর কমানো যায় কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে।

জ্বর কি?

বেশিরভাগ মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রার চেয়ে ১ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা জ্বর হিসাবে বিবেচিত হয়।

জ্বর যে কোনো জায়গায় কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি সংক্রমণের ধরনের উপর নির্ভর করে।

কখন চিকিৎসক দেখাতে হবে?

জ্বর সাধারণত জটিল বা চিন্তার কিছু না হলে মাঝে মাঝে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই জ্বরের লক্ষণভেদে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

১. শিশুদের ক্ষেত্রে

অতিরিক্ত জ্বর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় একটি ছোট শিশুর জন্য বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। শূন্য থেকে ৩ মাস বয়সী শিশুর মলদ্বারের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

৩ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুর মলদ্বারের তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে হলে এবং তারা খিটখিটে হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুর মলদ্বারের তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে এবং এক দিনের বেশি স্থায়ী, এ ছাড়া যদি তাদের অন্যান্য উপসর্গ থাকে, যেমন ফুসকুড়ি, কাশি বা ডায়রিয়া থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

২. প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে

জ্বর কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৯ ডিগ্রি বা তার বেশি জ্বর হলে এবং তিনদিনের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এ ছাড়া জ্বরের সাথে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, ফুসকুড়ি, ঘন ঘন বমি, শ্বাসকষ্ট, বুকে বা পেটে ব্যথা ও খিঁচুনি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

১. প্রচুর পরিমাণে তরল পান
জ্বর শরীরকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গরম করে তোলে। বিধায় এটি শরীরকে ঠান্ডা করার চেষ্টায় ঘামতে বাধ্য করে। এতে করে শরীর থেকে তরল পদার্থ বের হয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই জ্বর হলেই পানি পানের পাশাপাশি ফলের রস, লেবুর রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও পান করাতে হবে।

২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম প্রয়োজন
ভাইরাল জ্বর হল একটি লক্ষণ যে আপনার শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। তাই যতটা সম্ভব বিশ্রাম করা প্রয়োজন। এমনকি সারাদিন বিছানায় না থাকলেও যতটা সম্ভব শারীরিক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলা ভালো। এ ছাড়া প্রতি রাতে আট থেকে নয় ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমের প্রয়োজন।

৩. ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ ব্যবহার
জ্বরের চিকিৎসার জন্য সাধারণত ওষুধের প্রয়োজন না হলেও কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জ্বর কমাতে ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলির মধ্যে আইবুপ্রোফেন, অ্যাসিটামিনোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, অ্যাসপিরিন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

তবে শিশুদের কখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ দেয়া উচিত না। বিশেষ করে শিশুদের অ্যাসপিরিন দেয়া উচিত নয়। বেশিরভাগ বয়সের শিশুদের অ্যাসিটামিনোফেন দেয়া হয়। তবে এর পরিমাণ অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে দেয়া উচিত।

৪. হালকা আরামদায়ক পোশাক পড়া
জ্বর থাকলে একজন ব্যক্তির এক মুহূর্তে গরম এবং পরের মুহূর্তে ঠান্ডা অনুভব করতে পারে। ভারী জামাকাপড় শরীর থেকে তাপ বের হতে দিতে আটকাতে পারে বা শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়াতে পারে।

তাই শিশু বা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জ্বর হলেই হালকা ও আরামদায়ক, বিশেষ করে সুতি জামা পড়ানো উচিত।

৫. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস পান করলে জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, ফ্লু এবং অন্যান্য রোগ কমাতে সহায়তা করে।

৬. উষ্ণ পানিতে গোসল
হালকা উষ্ণ পানিতে গোসল শরীরের তাপমাত্রা কমানোর সেরা পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে পেশী শিথিল হয় এবং শরীর প্রশমিত হয়। এটি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং শক্তি সরবরাহ করে।

৭. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত জ্বর কমাতে সহায়ক। এ ছাড়া মুরগি বা কোন সবজির স্যুপ রোগের সাথে লড়াই করতে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমাতে শক্তি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

৮. স্পঞ্জ গোসল
স্পঞ্জ বাথ বা স্পঞ্জ গোসল একটি খুব ভাল কৌশল যা শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা হ্রাস করে। বিশেষ করে যারা অসুস্থতার কারণে বিছানায় শয্যাশায়ী।

একটি স্পঞ্জ বা তোয়ালে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে বাড়তি পানি নিংড়ে ফেলে দিয়ে শরীরের উপরিভাগ পরিষ্কার করা বা ঠাণ্ডা করতে ব্যবহার করা হয়। শরীরের তাপমাত্রা কমাতে এটি একাধিকবার পুনরাবৃত্তি হয়।

সূত্র: হেলথলাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে, মেডিসিননেট