জলবায়ু কাকে বলে

Admin
December 01, 2024
234
কোন নির্দিষ্ট স্থানের অন্তত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার সামগ্রিক অবস্থার হিসাব কে জলবায়ু বলা হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তন সাধারনত আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তন এর উপর নির্ভরশীল। কোন নির্দিষ্ট স্থানের আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তনের ফলে সেই স্থানের বৃহৎ এলাকা জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে থাকে। সাধারণত আবহাওয়ার কিছু পরিবর্তন যেমন: তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং আদ্রতা পরিবর্তন এর ফলে জলবায়ু ও পরিবর্তন হতে থাকে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন একটি ধীর এবং চলমান প্রক্রিয়া যা মোটামুটি উষ্ণ, আদ্র এবং সমভাবাপন্ন। বাংলাদেশের এই ধীর এবং চলমান জলবায়ু কে ‘ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু’ হিসেবে ও চিহ্নিত করা হয়।
জলবায়ুর কি
এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য আমাদের অনেকেরই অজানা। সাধারণত বেশ কিছুদিন ধরে আবহাওয়ার কয়েকটি উপাদান বিশ্লেষণ করে জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুর তাপমাত্রা, বৃষ্টি পাত, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর চাপ, আর্দ্রতা, তুষারপাত, মেঘাচ্ছন্নতা পর্যবেক্ষণ করলে যে সামগ্রিক রূপ ফুটে ওঠে তাকে সে স্থানের জলবায়ু বলা যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ এবং প্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে কোন স্থানে জলবায়ু হঠাৎ করে পরিবর্তন হয় না বরং ব্যাপক সময়ের ব্যবধান একটি স্থানে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে থাকে। প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষিকাজ, মানুষের সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্য, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রকৃতি, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পূর্ণভাবে সেই অঞ্চলের জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। নিচে আমরা জলবায়ুর উপাদান গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
জলবায়ুর উপাদান গুলো কি কি
আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন: বায়ুর তাপ, চাপ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এর মত জলবায়ুর উপাদানগুলো ও একই। বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বলতে বোঝানো হয় বায়ুর উষ্ণতম বা শীতলতম অবস্থাকে। বায়ুমন্ডলের এই তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন নির্ভরশীল। আবহাওয়া এবং জলবায়ু গড়ে ওঠার পেছনে কয়েকটি উপাদান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। জলবায়ুর প্রধান দুইটি উপাদান বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা হলেও এর আরো কিছু উপাদান রয়েছে। সেগুলো হলো:
১) তাপমাত্রা,
২) বায়ুর চাপ,
৩) বায়ু প্রবাহ,
৪) বায়ুর আদ্রতা ও শুষ্কতা,
৫) বৃষ্টিপাত।
চলুন নিচে জলবায়ুর উপাদান গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক:
১) তাপমাত্রা : তাপমাত্রা জলবায়ুর একটি মূল উপাদান। মূলত সূর্যের আলো পৃথিবীতে উষ্ণ করতে সাহায্য করে। তাই সূর্যের তাপের ভিন্নতার উপর এক এক স্থানের তাপমাত্রা একেক রকম হয়ে থাকে। তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণত সেলসিয়াস এবং ফারেনহাইট স্কেলে দেখায়। তাপমাত্রা জীবজগতের বৃদ্ধি, প্রজনন এবং বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টিপাত, বায়ু প্রবাহ এবং আবহাওয়ার অন্যান্য উপাদান পরিবর্তন হতে থাকে।
২) বায়ুচাপ : বায়ুচাপ বলতে বোঝায় কোন নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুর ওজনের চাপ। জলবায়ুর এই উপাদান মিলিবাল বা হেক্টোপাস্কাল এককে মাপা হয়ে থাকে। বায়ুর চাপে তারতম্য দেখা দেওয়ার প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সূর্যের তাপের প্রভাবে বায়ুর উষ্ণতা এবং ঘনত্বের তারতম্য সৃষ্টি হওয়া। বায়ুচাপের পরিবর্তন সরাসরি আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে। বায়ুর চাপ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১) উচ্চচাপ,
২) নিম্নচাপ।
সাধারণত যেখানে বায়ুর ঘনত্ব বেশি এবং তাপমাত্রা কম সেখানে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। এবং যেখানে বায়ুর ঘনত্ব কম আর তাপমাত্রা বেশি সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। প্রতিনিয়ত বায়ু চাপের পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। বিভিন্ন প্রকার জলবায়ুর বলয় সৃষ্টি হওয়ার জন্য বায়ু চাপের এই পরিবর্তন ই দায়ী। পৃথিবীতে তৈরি হওয়া বিভিন্ন প্রকার জলবায়ু বলয় গুলো হল: নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, আন্তঃক্রান্তিয় অভিসরণ এলাকা ইত্যাদি।
৩) বায়ু প্রবাহ : জলবায়ুকে প্রভাবিত করে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বায়ু প্রবাহ। বায়ু প্রতিনিয়ত থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হতে থাকে। বায়ুর এই প্রতিনিয়ত সঞ্চালনের ফলে তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে থাকে। এক এক স্থানের তাপমাত্রা এক এক রকম হওয়ার কারণে বায়ু উষ্ণ অঞ্চল থেকে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। তবে ভূমির বিভিন্ন আকার যেমন: পাহাড়, উপত্যকা এবং সমুদ্রের উপস্থিতির কারণে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তন হতে থাকে।
৪) বায়ুর আর্দ্রতা ও শুষ্কতা : জলবায়ুকে প্রভাবিত করে এমন অনেক উপাদানের মধ্যে বায়ুর আর্দ্রতা ও শুষ্কতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বায়ুর আদ্রতা এবং শুষ্কতা পরিবেশের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং সামগ্রিক জীবন যাপন এর ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। বায়ুর আদ্রতা বলতে বোঝায় বায়ুমন্ডলের বাষ্প রূপে উপস্থিত হওয়া পানি। বায়ুর আদ্রতার মাধ্যমে সহজে বাতাসে কতটুকু জলীয় বাষ্প রয়েছে তা বোঝা যায়। বায়ুর আদ্রতা বেশি হলে জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি পায়। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, যার ফলে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫) বৃষ্টিপাত : জলবায়ুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বৃষ্টিপাত। পৃথিবীতে পানির একটি বড় উৎস হল বৃষ্টিপাত। পরিবেশ সতেজ রাখা এবং ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিপাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীব জগতের প্রয়োজন ছাড়াও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। যদি কোন স্থানে বৃষ্টিপাত পর্যন্ত পরিমাণে হয় তাহলে ধরে নেওয়া হয় সেখানকার জলবায়ু আদ্র। আর যদি কোন স্থানে বৃষ্টিপাত কম হয় তাহলে সেখানকার জলবায়ু শুষ্ক বলে ধরে নেওয়া হয়। তাই বোঝা যাচ্ছে, জলবায়ুর তারতম্য অনেকটা নির্ভর করে বৃষ্টিপাতের তারতম্য এর।