জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে

জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে
Admin November 30, 2024 298
জীবাশ্মনি তাদের ব্যবহার, উপকারিতা এবং পরিবেশগত প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখার সময় কীভাবে কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস শক্তি শিল্পগুলি আবিষ্কার করে। একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিকল্পগুলি অন্বেষণ করুন এবং কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভরতা হ্রাস করা আমাদের গ্রহকে রক্ষা করতে পারে৷ শক্তির উত্স এবং বৈশ্বিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত অন্তর্দৃষ্টি পান।

জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে?

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পাললিক শিলার বিভিন্ন স্তরে আবদ্ধ হয়ে থাকা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ ভূগর্ভের তাপ ,চাপ ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে এবং বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে যেসব জ্বালানির সৃষ্টি করে,তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি বলে। যেমন - কয়লা , পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস।

জীবাশ্ম বলতে কি বুঝায়?

জ্বালানি বলতে সেই সব পদার্থকে বোঝায় যাদের ভৌত বা রাসায়নিক গঠন বা অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে শক্তির নিঃসরণ ঘটে। যেসব জ্বালানিতে এই শক্তি-নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জ্বালানি থেকে প্রাপ্ত শক্তি কাজে রূপান্তর করা যায়, তাদেরকে ব্যাবহারযোগ্য জ্বালানি বলা হয়।

জীবাশ্ম-জ্বালানির সমস্যা এবং জৈব-জ্বালানির সম্ভাবনা-

বর্তমান যান্ত্রিক বিশ্বে প্রযুক্তিগত যত উন্নয়ন ও অগ্রগতি, তাতে ফুয়েল বা জ্বালানির ভূমিকা অপরিহার্য। আজকের এই আধুনিক জীবন যেমন যন্ত্র ছাড়া অবান্তর, তেমনি জ্বালানি ছাড়া যান্ত্রিক সভ্যতা অসম্ভব। গোটা বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় আশি ভাগেরও বেশি যোগান দেয় ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম-জ্বালানি; বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানি। বলা যায় জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর আমরা আজ অনেকাংশে নির্ভরশীল। অন্যদিকে এই চরম নির্ভরশীলতাই আমাদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। গোটা বিশ্ব আজ জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যার পেছনে রয়েছে মুলত তিনটি কারণ; অনিশ্চিত জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিবেশ দূষণ এবং তেল ভিত্তিক ভূ-রাজনীতি।সারা বিশ্বে প্রতিদিন বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে যানবাহন আর শিল্প-কারখানা। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানি চাহিদা। ২০০৭ সালের এক হিসেব অনুযায়ী বিশ্বে মোট যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৮০৬ মিলিয়ন, যা ২০৩০ সালের দিকে ১.৩ বিলিয়ন এবং ২০৫০ সালের দিকে ২ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য তরল জ্বালানির ব্যাবহার ছিল প্রতিদিন ৮৫.৭ মিলিয়ন ব্যারেল, যা ২০৩৫ সালের দিকে ১১২.২ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছাবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা বিশ্বে সব ধরনের জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যাবহার ছিল শূন্যের কোটায়, যা ক্রমবর্ধমান ভাবে বেড়ে গত শতকের শেষ দিকে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭,৫০০ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক গ্যাস, ৬,০০০ মিলিয়ন টন পেট্রোলিয়াম তেল এবং ২,০০০ মিলিয়ন টন কয়লা। অন্যদিকে জীবাশ্ম-জ্বালানির সঞ্চিত ভান্ডার সীমিত ও অ-নবায়নযোগ্য, এবং ধারনা করা হচ্ছে আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে এই মজুদ নিঃশেষ হয়ে যাবে।জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হল এই জ্বালানি পোড়ানোর ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণ এবং পরিবেশে অস্বাভাবিক ভাবে এসব গ্যাসের জমা হওয়া, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারন হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির অনেকগুলো ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং জীব বৈচিত্র্য হ্রাস অন্যতম। গ্রিন হাউজ গ্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড যার পরিমাণ জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান ছিল শুন্যের কাছাকাছি, অর্থাৎ মোট নিঃসৃত এবং ব্যবহৃত গ্যাসের মধ্যে একটি সমতা ছিল, ছিল ভারসাম্য। অথচ ক্রমবর্ধমান জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহারের ফলে ২০১২ সালে পরিবেশে এই গ্যাসের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায়  ১০,০০০ মিলিয়ন টন।তেল উৎপাদন ও বিপণনে বৈশ্বিক রাজনীতিও বর্তমানে একটি উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্তুরের দশকে আরব দেশগুলোর তেল অবরোধের কারনে পুরা বিশ্বে জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল এবং তেলের সরবরাহ মারাত্নক ভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল। অন্যদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাত করে তেলের দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে অনেক তেল উৎপাদনকারী দেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে।


জীবাশ্ম জ্বালানি না থাকলে কী হতো?

১৬ শতকের শেষ দিকে আবিষ্কৃত হয় খনিজ কয়লা। এর কিছুকাল পরেই শিল্প বিপ্লবের নতুন যুগের সূচনা ঘটে। পৃথিবীতে জ্বালানি চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। শিল্প বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তিই ছিল কয়লা। পরে ধীরে ধীরে আবিষ্কার হয় তেল বা গ্যাসের মতো নবায়ন অযোগ্য জ্বালানি।আজকের পৃথিবী বিদ্যুৎ ছাড়া কল্পনা করা কঠিন। বিদ্যুতের বড় অংশ তৈরি হয় এসব জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে। শুধু কি বিদ্যুৎ? পৃথিবীজুড়ে মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটছে। এই ছোটাছুটির জন্য যে যানবাহন তার শক্তিও আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। যেদিক থেকেই দেখি না কেন, সভ্যতার এই অগ্রগতির পেছনে জীবাশ্ম জ্বালানির বড় অবদান রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি না থাকলে সভ্যতা কি এতদূর আসতে পারত? জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়া পৃথিবীটা কেমন হতো?কয়লা এবং পেট্রোলিয়াম জাতীয় তেল যে শুধু জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহৃত হয়, তা কিন্তু নয়। প্লাস্টিক, সিন্থেটিক রবারের মতো উপাদান তৈরি করা করার কাজেও ব্যবহৃত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি। এ জ্বালানি না থাকলে হাইড্রোকার্বনের দীর্ঘ চেইন অণুগুলো সংশ্লেষণ করতে হতো ইথানল বা ভোজ্য তেল থেকে। ইথানল ও ভোজ্য তেল থেকে এসব উপাদান সংশ্লেষণ করার পদ্ধতিটি বেশ জটিল। ফলে প্লাস্টিক এবং সিন্থেটিক রবারের মতো উপাদান আবিষ্কৃত হতো অনেক দেরীতে। এসব পণ্যের দামও হতো অনেক বেশি।