হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীদের নাম
-6741da921b956.jpg)
নবীজির স্ত্রীদের নাম ও পরিচয়
(১) খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ ঃ
হযরত খাদিজা (রা:) এর সাথে বিবাহকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ২৫ বছর ও খাদিজা (রা:) এর ছিল বয়স ৪০। তিনি ১০ম হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে তাঁর দাম্পত্যকাল প্রায় ২৫ বছর। তিনি বেঁচে থাকা অবধি রাসূল (ছাঃ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।
পূর্বে খাদিজা (রা:) দুই স্বামী হারান। প্রথম স্বামী ছিলেন উতাইয়িক্ব বিন ‘আবেদ বিন আব্দুল্লাহ মাখযূমী। তাঁর ঔরসে এক ছেলে আব্দুল্লাহ ও এক মেয়ে জন্ম নেয় (ইবনু হিশাম ২/৬৪৩-৪৪)।
তার মৃত্যুর পর ২য় স্বামী আবু হালাহ বিন মালেক তামীমী-এর ঔরসে হালাহ, তাহের ও হিন্দ নামে ৩ পুত্র ছিল। যারা সবাই পরে ছাহাবী হন। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তাঁর তৃতীয় স্বামী এবং তিনি ছিলেন তাঁর প্রথমা স্ত্রী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঔরসে তাঁর দুই ছেলে ক্বাসেম ও আব্দুল্লাহ ও চার মেয়ে যয়নব, রুক্বাইয়াহ, উম্মে কুলছূম ও ফাতেমা জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম সন্তান ক্বাসেমের নামেই তাঁর উপনাম ছিল আবুল ক্বাসেম। পুত্র আব্দুল্লাহর লক্বব ছিল ত্বাইয়িব ও ত্বাহের’ (ইবনু হিশাম ১/১৯০)। জাহেলী যুগে খাদীজা ‘ত্বাহেরাহ’ (طَاهِرَةٌ) অর্থ ‘পবিত্রা’ নামে এবং ইসলামী যুগে ‘ছিদ্দীক্বাহ’ (صِدِّيْقَةٌ) অর্থ ‘নবুঅতের সত্যতায় প্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারিণী’ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। বড় স্ত্রী হিসাবে তিনি ‘খাদীজাতুল কুবরা’ নামেও পরিচিত।
(২) সওদা বিনতে যাম‘আহঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ৫০, তাঁর বয়সও ৫০ বছর। মৃত্যুকাল তার বয়স ছিল ৭২ বছর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দাম্পত্য জীবন ১৪ বছর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর স্ত্রীদের মধ্যে তিনিই প্রথম মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি প্রথমদিকে ইসলাম কবুল করেন। পরে তাঁর উৎসাহে স্বামী সাকরান বিন ‘আমর মুসলমান হন। অতঃপর উভয়ে হাবশায় হিজরত করেন। সাকরান সেখান থেকে মক্কায় ফিরে এসে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তখন সন্তানদের নিয়ে তার বিধবা স্ত্রী সওদা চরম বিপাকে পড়েন।
ওই সময়ে খাদীজাকে হারিয়ে বিপদগ্রস্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাধ্য হয়ে সংসারে অভিজ্ঞ সওদাকে বিয়ে করেন ও তার হাতে সদ্য মাতৃহারা সন্তানদের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ৫টি। ১টি বুখারীতে ও ৪টি সুনানে আরবা‘আহতে।
উল্লেখ্য যে, সাকরান হাবশায় গিয়ে ইসলাম ত্যাগ করে নাছারা হন ও সেখানে মৃত্যুবরণ করেন মর্মে ত্বাবারী ও ইবনুল আছীর যে বর্ণনা করেছেন, তা ছহীহ বা যঈফ কোনভাবেই প্রমাণিত নয় (মা শা-‘আ পৃঃ ৪৪-৪৫)।
(৩) আয়েশা বিনতে আবুবকরঃ
হিজরতের তিন বছর পূর্বে শাওয়াল মাসে হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬/৭ বছর। হিজরতের ১৬/১৭ মাস পর তিনি মদীনায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সহিত বসবাস আরম্ভ করেন।
তিনিই একমাত্র কুমারী স্ত্রী ছিলেন। কোন সন্তানাদি হয়নি। নবীপত্নীগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী, বুদ্ধিমতী ও হাদীছ বিশেষজ্ঞ মহিলা। জ্যেষ্ঠ ছাহাবীগণ বিভিন্ন ফাৎওয়ায় তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করতেন ও তাঁর সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দিতেন। আবু মূসা আশআরী (রাঃ) বলেন, আমরা কোন বিষয়ে আটকে গেলে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকটে গিয়ে তার সমাধান নিতাম (তিরমিযী হা/৩৮৮৩)।
তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ২২১০টি। তন্মধ্যে ১৭৪টি মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ৫৪টি এককভাবে বুখারী ও ৯টি এককভাবে মুসলিম। বাকী ১৯৭৩টি মুসনাদে আহমাদ সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে।
উল্লেখ্য যে, আয়েশা (রাঃ)-এর পিতা আবুবকর (রাঃ) ছিলেন একমাত্র ছাহাবী, যাঁর পরিবারে চারটি স্তরের সবাই মুসলমান ছিলেন। যা অন্য কোন ছাহাবীর মধ্যে পাওয়া যায় না’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/১৫৯)। অর্থাৎ আবুবকর (রাঃ) নিজে, তাঁর পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যাগণ এবং তাদের সন্তানগণ।
তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ৮ বছর ৫ মাস জীবন যাপন করেন।রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর।হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর তিনি ৪৮ বছর জীবিত ছিলেন।
ইন্তেকাল: হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) ৫৭/৫৮ হি. সনে মতান্তরে ৬৫/৬৭ বছর বয়সে ১৭ রমজান মঙ্গলবার রাতে মদিনা শরীফে ইন্তেকাল করেন। তাঁর অসিয়ত মােতাবেক রাতের অন্ধকারে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
(৪) হাফছাহ বিনতে ওমরঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ৫৫, তাঁর বয়স ২২, বিবাহ শা‘বান ৩ হিজরী; মৃত্যুসন-৪১হি.; দাফন- মদীনা; বয়স-৫৯। দাম্পত্য জীবন- ৮ বছর।
তাঁর পূর্ব স্বামী খুনায়েস বিন হুযাফাহ সাহ্মী প্রথমে হাবশা ও পরে মদীনায় হিজরত করেন। বদর ও ওহোদ যুদ্ধে শরীক ছিলেন। ওহোদে যখমী হয়ে মারা যান। পরে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাফছার বিয়ে হয়। তিনি মোট ৬০টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ৪টি, এককভাবে মুসলিম ৬টি। বাকী ৫০টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে। প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) ছিলেন তাঁর সহোদর ভাই।
(৫) যয়নব বিনতে খুযায়মাঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ৫৫, তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। বিবাহ সন ৩ হিজরী; মৃত্যুসন ৩ হি., বয়স ৩০; দাফন- মদীনা; দাম্পত্য জীবন ২ অথবা ৩ মাস।
দুই স্বামী হারিয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফুফাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন জাহশের সাথে তৃতীয় বিবাহ হয়। কিন্তু তিনি ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হলে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে চতুর্থ বিবাহ হয়। অধিক দানশীল ও গরীবের দরদী হিসাবে তিনি ‘উম্মুল মাসাকীন’ বা ‘মিসকীনদের মা’ নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি কোন হাদীছ বর্ণনা করেননি।
(৬) উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়াহঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ৫৬ বছর; তাঁর বয়স ২৬ বছর। বিবাহ সন ৪ হি.; মৃত্যুসন ৬০ হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৮০ বছর। দাম্পত্য জীবন- ৭ বছর। স্ত্রীদের মধ্যে তিনি সবশেষে মৃত্যুবরণ করেন।
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আপন ফুফাতো ভাই ও দুধভাই আবু সালামাহর স্ত্রী ছিলেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে হাবশায় হিজরত করেন। আবু সালামাহ বদর ও ওহোদ যুদ্ধে শরীক হন। ওহোদে যখমী হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে উম্মে সালামাহ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। তাঁর দূরদর্শিতাপূর্ণ পরামর্শ হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে খুবই ফলপ্রসু প্রমাণিত হয় (বুখারী হা/২৭৩২)।
তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ৩৭৮। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ১৩, এককভাবে বুখারী ৩টি, মুসলিম ১৩টি। বাকী ৩৪৯টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে।
(৭) যয়নব বিনতে জাহশঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ৫৭, তাঁর বয়স ছিল ৩৬ বছর। বিবাহ সন ৫হি. মৃত্যুসন ২০হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৫১ বছর। দাম্পত্য জীবন- ৬ বছর।
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফুফাতো বোন ছিলেন। প্রথমে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পোষ্যপুত্র যায়েদ বিন হারেছাহর সাথে বিবাহ হয়। পরে যায়েদ তালাক দিলে আল্লাহর হুকুমে তিনি তাকে বিয়ে করেন প্রচলিত দু’টি কুসংস্কার দূর করার জন্য।
(এক) সে যুগে পোষ্যপুত্রকে নিজ পুত্র এবং তার স্ত্রীকে নিজ পুত্রবধু মনে করা হ’ত ও তার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ মনে করা হ’ত।
(দুই) ইহূদী ও নাছারাগণ ওযায়ের ও ঈসাকে আল্লাহর পুত্র গণ্য করত (তওবা ৯/৩০)। অথচ সৃষ্টি কখনো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তান হ’তে পারে না। যেমন অপরের ঔরসজাত সন্তান কখনো নিজের সন্তান হ’তে পারে না। তিনি মোট ১১টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ২টি। বাকী ৯টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ২/২১৮)।
(৮) জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারেছঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ৫৭, তাঁর বয়স ছিল ২০। বিবাহ শা‘বান ৫হি.; মৃত্যু সন ৫৬হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৭১। দাম্পত্য জীবন- ৬ বছর।
তিনি বনু মুছত্বালিক্ব নেতা হারেছ বিন আবু যাররাবের কন্যা ছিলেন। ৫ম হিজরীতে বনু মুছত্বালিক্ব যুদ্ধে বন্দী হয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিবাহিতা হন এবং রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শ্বশুরকুল হওয়ার সুবাদে একশ’-এর অধিক যুদ্ধবন্দীর সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়। ফলে তারা সবাই মুসলমান হয়ে যায়। জুওয়াইরিয়ার প্রথম স্বামী ছিলেন মুসাফিহ বিন সুফিয়ান মুছতালিক্বী। তিনি মোট ৭টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে বুখারী ২টি, মুসলিম ২টি। বাকী ৩টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে।
(৯) উম্মে হাবীবাহ রামলাহ বিনতে আবু সুফিয়ানঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ৫৮; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ মুহাররম ৭হি.; মৃত্যু সন- ৪৪হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৭২। দাম্পত্য জীবন- ৪ বছর।
কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন। ওবায়দুল্লাহ বিন জাহশ আসাদী তার প্রথম স্বামী ছিলেন। উভয়ে মুসলমান হয়ে হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে স্বামী মারা যান। তিনি একটি কন্যা সন্তান নিয়ে বিধবা হন। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চরম বিপদের কথা জানতে পেরে ৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে ‘আমর বিন উমাইয়া যামরীর মাধ্যমে বাদশাহ নাজাশীর নিকট পত্র প্রেরণ করেন ও তার সাথে বিবাহের পয়গাম পাঠান। নাজাশী স্বয়ং তার বিবাহের খুৎবা পাঠ করেন।
তিনি রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষে ৪০০ দীনার মোহরানা পরিশোধ করেন ও সবাইকে দাওয়াত খাওয়ান। পরে তাঁকে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেরিত দূত শুরাহবীল বিন হাসানাহ (রাঃ)-এর মাধ্যমে মদীনায় পাঠিয়ে দেন (আল-ইছাবাহ, রামলাহ ক্রমিক ১১১৮৫)।
তিনি ৬৫টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ২টি ও মুসলিম ১টি। বাকী ৬২টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে। উল্লেখ্য যে, ওবায়দুল্লাহ বিন জাহশ হাবশায় গিয়ে ‘মুরতাদ’ ও ‘নাছারা’ হয়ে গিয়েছিলেন ও উক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন’ বলে যে ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে, তা প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে ইবনু সা‘দ যে বর্ণনা এনেছেন তা ‘মুরসাল’ বা যঈফ (মা শা-‘আ পৃঃ ৩৭-৪৩)।
(১০) ছাফিইয়াহ বিনতে হুয়াই বিন আখত্বাবঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ৫৯; তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর। বিবাহ ছফর ৭হি.; মৃত্যুর সন ৫০ হি.; বয়স ৬০; দাফন- মদীনা; দাম্পত্য জীবন- ৪ বছর।
তিনি খায়বার যুদ্ধে বন্দী হন। পরে ইসলাম কবুল করে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিবাহিতা হন। মদীনা থেকে বিতাড়িত ইহূদী বনী নাযীর গোত্রের সর্দার হুয়াই বিন আখত্বাব-এর কন্যা এবং অন্যতম সর্দার কেনানাহ বিন আবুল হুক্বাইক্ব-এর স্ত্রী ছিলেন। উভয়ে নিহত হন। হযরত হারূণ (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ১০টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ১টি। বাকী ৯টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। স্ত্রীদের মধ্যে ইনিই ছিলেন একমাত্র ইহূদী কন্যা।
(১১) মায়মূনা বিনতুল হারেছঃ
রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স ছিল ৫৯ বছর; তাঁর বয়স ছিল ৩৬ বছর। বিবাহ যুলক্বা‘দাহ ৭ হি.; মৃত্যুর সন ৫১ হি.; দাফন মক্কার নিকটবর্তী ‘সারিফে’; বয়স ৮০। দাম্পত্য জীবন- সোয়া তিন বছর।
তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) ও খালেদ বিন অলীদ (রাঃ)-এর আপন খালা ছিলেন এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মার সহোদর বৈপিত্রেয় বোন ছিলেন। যিনি ইতিপূর্বে ৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পূর্বের দুই স্বামী মারা গেলে ভগ্নিপতি হযরত আববাস (রাঃ) রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে তার বিবাহের প্রস্তাব দেন। ফলে ৭ম হিজরীতে ক্বাযা ওমরাহ শেষে ফেরার সময় মক্কা থেকে ৬ কি.মি. উত্তরে তান‘ঈম-এর নিকটবর্তী ‘সারিফ’ নামক স্থানে উক্ত বিবাহ সম্পন্ন হয়। এটিই ছিল রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বশেষ বিবাহ।
তিনি মোট ৭৬টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ৭টি, এককভাবে বুখারী ১টি, মুসলিম ৫টি। বাকী ৬৩টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।
নবীপত্নীগণের মর্যাদা (مناقب أمهات المؤمنين):
১. পবিত্র কুরআনে তাঁদেরকে يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ ‘হে নবীপত্নীগণ’ বলে সম্বোধন করে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে (আহযাব ৩৩/৩০, ৩২)। অন্যত্র أَزْوَاجِكَ ‘তোমার স্ত্রীগণ’ (আহযাব ৩৩/২৮, ৫৯; তাহরীম ৬৬/১-২) বলা হয়েছে। ‘যাওজ’ (زَوْجٌ) অর্থ জোড়া, সমতুল্য, সমপর্যায়ভুক্ত বস্ত্ত। যেমন বলা হয়, زَوْجَا خُفٍّ ‘মোযার দু’টি জোড়া’। রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণকে তাঁর أَزْوَاج বলার মাধ্যমে তাঁদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। অথচ امْرَأَةٌ (স্ত্রী) শব্দ বলা হয়নি, যা অন্যান্য নবী এবং নবী নন এমন সকলের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে (তাহরীম ৬৬/১০)। যেমন- হযরত নূহ ও লূত (আঃ)-এর স্ত্রীদের ক্ষেত্রে امْرَأَتَ نُوْحٍ وَامْرَأَتَ لُوْطٍ ‘নূহের স্ত্রী, লূত্বের স্ত্রী’ বলা হয়েছে। অন্যদিকে ফেরাঊনের স্ত্রীর ক্ষেত্রে, امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ (তাহরীম ৬৬/১১) এবং আবু লাহাবের স্ত্রীর ক্ষেত্রে امْرَأَتُهُ (লাহাব ১১১/৪) বলা হয়েছে। ইবরাহীমের স্ত্রীর ক্ষেত্রে امْرَأَتُهُ বা ‘তার স্ত্রী’ (যারিয়াত ৫১/২৯) এবং أَهْلَ الْبَيْتِ বা ‘পরিবার’ (হূদ ১১/৭৩) বলে দু’ধরনের শব্দ এসেছে। তবে যাকারিয়ার স্ত্রীর ক্ষেত্রে امْرَأَتِيْ (মারিয়াম ১৯/৫) এবং زَوْجَهُ (আম্বিয়া ২১/৯০) দু’টি শব্দ এসেছে। কিন্তু শেষনবীর স্ত্রীগণের ক্ষেত্রে কেবল أَزْوَاج শব্দ খাছ করার মাধ্যমে তাঁদের মর্যাদাকে অন্য সকলের উপর বিশেষভাবে উন্নীত করা হয়েছে।
২. নবীপত্নীগণের মর্যাদা পৃথিবীর সকল মহিলার উপরে। যেমন আল্লাহ বলেন, لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ ‘তোমরা অন্য কোন মহিলার মত নও’ (আহযাব ৩৩/৩২)। এখানে كَأَحَدٍ শব্দ ব্যবহার করায় নবী ও নবী নন, সকলের স্ত্রী ও সকল মহিলাকে বুঝানো হয়েছে। নবীপত্নীগণের উচ্চ মর্যাদায় স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত এই অনন্য সনদ নিঃসন্দেহে গৌরবের এবং একই সাথে মুসলিম উম্মাহর জন্য নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় বিষয়।
৩. আল্লাহ নবীপত্নীগণকে নিষ্কলংক ঘোষণা করেছেন এবং তাদের গৃহকে সকল প্রকারের আবিলতা ও পংকিলতা হ’তে মুক্ত বলেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا ‘হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র করতে’ (আহযাব ৩৩/৩৩)।
৪. আল্লাহ নবীপত্নীগণের গৃহগুলিকে ‘অহীর অবতরণ স্থল’ (مَهْبِطُ الْوَحْيِ) হিসাবে ঘোষণা করেছেন। যা তাঁদের মর্যাদাকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ إِنَّ اللهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا ‘আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং হিকমতের (হাদীছের) কথাসমূহ, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, সেগুলি তোমরা স্মরণ রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব সূক্ষ্মদর্শী ও সকল বিষয়ে অবহিত’ (আহযাব ৩৩/৩৪)।
৫. নবীর মৃত্যুর পরে তাঁরা সকলের জন্য ‘হারাম’ এবং তাঁরা ‘উম্মতের মা’(وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ) হিসাবে চিরদিনের জন্য বরণীয় হয়েছেন (আহযাব ৩৩/৫৩; ৩৩/৬)। সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত এই মর্যাদা পৃথিবীর কোন মহিলার ভাগ্যে হয়নি। অতএব সত্যিকারের মুমিন সেই ব্যক্তি যিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নিজের জীবনের চাইতে ভালবাসেন এবং তাঁর স্ত্রীগণকে মায়ের মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন করেন।
৬. প্রথমা স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) ছিলেন বিশ্বসেরা চারজন সম্মানিতা মহিলার অন্যতম। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَفَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَمَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَآسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ‘জান্নাতী মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’লেন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম’।[1]
(ক) খাদীজা (রাঃ) ছিলেন সেই মহীয়সী মহিলা যাকে জিব্রীল নিজের পক্ষ হ’তে ও আল্লাহর পক্ষ হ’তে রাসূল (ছাঃ)-এর মাধ্যমে সালাম দেন এবং জান্নাতে তাঁর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত মুক্তাখচিত প্রাসাদের সুসংবাদ দেন।[2] (খ) স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে জিব্রীল (আঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর মাধ্যমে সালাম পাঠান এবং তিনিও তার সালামের জওয়াব দেন (বুখারী হা/৬২০১)। তিনি ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে সর্বাধিক প্রিয় (বুখারী হা/৩৬৬২)।