ব্যবস্থাপনা কাকে বলে

Admin
November 27, 2024
270
ব্যবস্থাপনা
ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কার্যাবলি পরিচালনা করে থাকে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্য পরিচালনা করাকে ব্যবস্থাপনা বলে।
ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য
সমাজবদ্ধ মানুষের বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে ব্যবস্থাপনা একটি সর্বজনীন বিষয় হিসেবে পরিচিত । প্রতিষ্ঠানভেদে ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। নিম্নে ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১.অবিরাম প্রক্রিয়া:ব্যবস্থাপনা হলো কতকগুলো ধারাবাহিক কাজের সমষ্টি। ব্যবস্থাপনার এই কাজগুলো পর পর ধারাবাহিক ও অবিরামভাবে চলতে থাকে। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনাকে কতকগুলো কার্য যেমন- পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে সাম্পাদন করতে হয়।
২.লক্ষ্য অর্জনের উপায়:ব্যবস্থাপনা হলো একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের উপায় । এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হয়। লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাকার্য পরিচালনা করা যায় না।
৩.সামাজিক প্রক্রিয়া:ব্যবস্থাপনা হলো একটি সামাজিক প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি সমাজবন্ধ মানুষের কল্যাণসাধন ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করে।
৪.কাজ আদায়ের কৌশল:ব্যবস্থাপনা হচ্ছে অন্যের মাধ্যমে কাজ আদায় করে নেওয়ার একটি কৌশলবিশেষ । কারণ একজন ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানে গৃহীত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য কর্মীদেরকে কাজের যথাযথ দায়িত্ব প্রদান করেন। কার্যসম্পাদনের উপযুক্ত নির্দেশনা দান করেন, প্রেষণা দান করেন, নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ আদায় করে নেন।
৫.জ্ঞানের পৃথক শাখা:বর্তমানে ব্যবস্থাপনাকে জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা। হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কেননা ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়া দক্ষতার সাথে ব্যবস্থাপকীয় কার্য পরিচালনা করা যায় না।
ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
কর্মীদের কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাস্তবে রূপদান করার যে কার্য প্রক্রিয়া তাকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যবস্থাপনার তাৎপর্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এটি হচ্ছে উদ্দেশ্য অর্জনের চাবিকাঠি। যে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা যত সুদক্ষ, সে প্রতিষ্ঠান ততই উন্নত। নিচে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
১. উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার:কোনোকিছু উৎপাদনের জন্য যেসব উপাদান বা বস্তু ব্যবহৃত হয় তাকে উপকরণ বলে । উৎপাদনের উপকরণাদি যথা ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনার 6m তথা Men, machine, material, money, markets method-এর সুষ্ঠু ব্যবহার ও উন্নয়ন যথাযথ ব্যবস্থাপনা ব্যতীত নিশ্চিত করা যায় না।
২.দক্ষতা বৃদ্ধি:অধিকতর কম সময় ও বায়ে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করার সামর্থ্যকে দক্ষতা বলে । কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । আর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে স্বল্প ব্যয়ে এবং অল্প সময়ে উন্নতমানের পণ্য ও সেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে দ্রুত পৌঁছানো যায়।
৩.শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা:শৃঙ্খলা বলতে প্রতিষ্ঠানের রীতিনীতি, নিয়মকানুন, সুব্যবস্থা ইত্যাদিকে বোঝায়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা একান্ত আবশ্যক। একমাত্র সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে।
৪.গবেষণা ও উন্নয়ন:দক্ষ ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্য পরিচালিত হলে নিত্যনতুন কলাকৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়। ফলে মানুষের জীবনধারণের মানোন্নয়নে সহায়ক হয়।
৫.অপচয় হ্রাস:ব্যবসায়ে সফলতা অর্জনের মূলমন্ত্র হলো Maximum Production at minimum cost. অর্থাৎ কম খরচে অধিক উৎপাদন। দক্ষ ব্যবস্থাপনাই একটি প্রতিষ্ঠানের সকল ক্ষেত্রে অপচয় ও অপবায় রোধ করে সাফল্যের সাথে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারে।
৬.সমস্যা সমাধান:প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা একজন বন্ধু, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শকের ন্যায় কাজ করে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা তার বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে এবং সফলভাবে কার্যসম্পাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৭.উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা:একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পক্ষ থাকে, যেমন— মালিক, ব্যবস্থাপক, শ্রমিক-কর্মী, ক্রেতা, ভোক্তা ও সরবরাহকারী। এসব পক্ষের মধ্যে যদি কোনো মতবিরোধ থাকে, তা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কমিয়ে আনা যায়।
৮.প্রতিযোগিতার মোকাবিলা:তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে উত্তম ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে নিত্যনতুন কল্পনা, নতুন চিন্তাভাবনা, আদর্শ ও নতুন ধ্যানধারণার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে এদের গতিশীল করে প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
৯.কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি:ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধিতে ব্যবস্থাপন অবদান অনস্বীকার্য। ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
১০.জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন:মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ব্যবস্থাপনা বিশেষভাবে সাহায্য করে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কম খরচে অধিক উৎপাদন, কম মূল্যে উন্নতমানের পণ্যসামগ্রী সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে ব্যবস্থাপনা জনসাধারণের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।