বাঙালিরা জেগে ওঠে দুর্বার সংগ্রামে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধ। তারা বাঙালির প্রাণ মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করল। আর তখনই বীরের জাতি বাঙালি গা–ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠল, সংঘটিত হল ভাষা আন্দোলন। আর তার পরপর থাকে থেকেই জাগ্রত হলো তাদের মুক্তির চেতনা।
মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অস্তিত্বের প্রশ্নের মূল ভিত্তি হলো ১৯৭১ সালের সুদীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী ও বিভীষিকাময় মহান মুক্তিযুদ্ধ। পৃথিবীর অন্যসব দেশের মতো এতো সহজেই এই স্বাধীনতা নামক মুক্তির স্বাদ বাঙালি জাতির কাছে এতো সহজে ধরা দেয়নি। এর পেছনে রয়েছে কত মায়ের কোল খালির বিষাদময় গল্প, কত বাবার পুত্র হারানোর বেদনা, আছে স্বজন হারানোর ক্ষত, আছে কত মা–বোনের জীবনতুল্য কুমারীত্ব, আছে কত নারীর সিঁথির সিঁদুর হারানোর মতো মর্মান্তিক আঘাত। এতো সব কিছুর বিনিময়ে তবেই না পেয়েছি আমরা স্বাধীনতা নামক শব্দ, মুক্তির আনন্দ। সংক্ষেপে তারই বর্ণনা-
(১) মুক্তিযুদ্ধ শুরু ও স্বাধীনতা ঘোষণা :
বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানের ইয়াহিয়া, টিক্কা খান। রাতের অন্ধকারে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত বাহিনীকে লেলিয়ে দেয় ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালি নিধনে। হিংস্র পাক–পাকবাহিনী ঢাকার পিলখানা, ইপিআর হেডকোয়ার্টার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর গ্রেফতারের আগে ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাছাড়া ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় তিনি জোরালোভাবে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এরপর ২৭শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাটের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এ ঘোষণার সাথে সাথে সারাদেশে শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম।
(২) মুক্তিবাহিনী ও মুজিবনগর সরকার গঠন :
স্বাধীনতা সংগ্রামের কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে সাবেক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র–যুবক, কৃষক–শ্রমিক, ব্যবসায়ী–মজুরসহ সব শ্রেণীর সব সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। তারা দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাহিরে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অবস্থান ও নামমাত্র ট্রেনিং নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুসেনার ওপর। ১০ই এপ্রিলের ঘোষণা অনুযায়ী গঠন করা স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার। বিপ্লবী সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাঠামো নিম্নরূপ :
রাষ্ট্রপতি — শেখ মুজিবুর রহমান
উপরাষ্ট্রপতি — সৈয়দ নজরুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী — তাজউদ্দিন আহমেদ
পররাষ্ট্র মন্ত্রী — খন্দকার মোশতাক আহমেদ
অর্থমন্ত্রী — ক্যাপ্টেন মনসুর আলী
স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন মন্ত্রী — এ এইচ এম কামরুজ্জামান
সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক — জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুর জেলার ভবের পাড়া বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের সামনে সরকার শপথ গ্রহণ করে। তাছাড়া দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠন করা হয় একটি উপদেষ্টা কমিটি।
(৩) মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় :
দীর্ঘ নয়মাসব্যাপী বাংলাদেশের জেগে ওঠা মানুষ জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করে হায়েনা পশ্চিম পাকিস্তানের বাহিনীর সাথে। তারা সামান্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গেরিলা আক্রমন চালিয়ে কাবু করে পাক হানাদার বাহিনী কে। তাদের নানা ভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করে ভারত সরকার। শেষে প্রত্যক্ষভাবে তারা যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীর সাথে। মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনী নিয়ে মিলিতভাবে গড়ে তোলা হয় যৌথ বাহিনী। এ যৌথ বাহিনীর আক্রমনে পর্যুদস্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার সৈন্যসহ পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজি মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। অবসান হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। বাংলার আকাশে আবার উদিত হয় লাল টকটকে রক্তিম স্বাধীনতার সূর্য। বাঙালিরা পায় তাদের স্বাধীন দেশ, স্বাধীন ভাষা, স্বাধীন লাল - সবুজের পতাকা এবং চির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য :
বিজয় দিবসের তাৎপর্যকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। এ বিজয় দিবসের মাধ্যমেই আমরা গৌরবময় স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, স্বপরিচয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়েছিলাম। রক্ত নদীর উজান বেয়ে এসেছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার। স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত আমাদের দেশ পুর্নগঠন করবার সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা বিজয় দিবসের মাধ্যমে। জাতির কাছে প্রতিবছর বিশেষ মর্যাদা নিয়ে এসে হাজির হয় বিজয় দিবস। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। বিজয় দিবসে আমাদের শপথ হওয়া উচিত, যে কোনো মূল্যে আমাদের দেশের স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখব। সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠন করতে পারলেই বিজয় দিবসকে অর্থবহ করে তোলা সম্ভব।
বিজয় দিবস উৎযাপন :
প্রতিবছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য আমরা ওই দিন ভোরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। বিজয় দিবস উপলক্ষে এ দেশের সর্বস্তরের জনগন নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। স্কুল - কলেজের ছাত্রছাত্রী নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আলোচনাসভা, কুচকাওয়াজ, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। তাছাড়া মসজিদ - মন্দির - গির্জায় জাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্যে দোয়া কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এই দিনের অনুষ্ঠানমালা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত ও উজ্জীবিত করে।
বিজয় দিবসে দেশবাসীর করণীয় :
বিজয় দিবসে শপথ নিতে হবে যে, বাংলাদেশের গৌরবময় বিজয়কে জাতীয় জীবনে স্থিতিশীল করে রাখার শথপ নিয়ে দেশ ও জাতির জন্যে আমরা আমাদের কাজ করে যাব। বিজয় দিবসের চেতনাকে আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশে একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বিজয় দিবসের সত্যিকারের তাৎপর্য আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হব। আমাদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, সংকট, অভাব, অনটন, অশিক্ষা, দারিদ্র্য দূর করে দেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই স্বাধীনতাপ্রাপ্তি সকল দিক থেকে অর্থবহ হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা এলেও অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসে নি। অর্থনৈতিক মুক্তি আসলেই বিজয় দিবসের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, আমাদের সকলকে তাই অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে, জাতির কল্যাণের জন্যে একত্রে কাজ করে যেতে হবে।
বিজয় দিবস ও বর্তমান অবস্থা :
শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবের আঘাতে ছিন্নভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই অনেককিছুই এখন চলে গেছে আড়ালে। গণতন্ত্র এখন সংকটের আর্বতে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এখন স্বপ্ন ও বিলাসিতা। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয়েছে পরিত্যক্ত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা বিভেদ ও সংঘাতে পর্যবসিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বিজয় দিবস এখনও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা :
বিজয় দিবস উদযাপিত হয় মহাসমারোহে। এ দিন সারাদেশ ছেয়ে যায় লাল সবুজের সাজে। বাড়ির ছাদে, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাড়ির সামনে, স্কুল কলেজে, এমনকি রিকশাওয়ালার হ্যান্ডেলে শোভা পায় লাল সবুজের রঙের জাতীয় পতাকা। প্রতিটি শহরে পরিলক্ষিত হয় উৎসবের আমেজ। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আয়োজন করে গণমুখী নানা অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতার আবেগে উদ্বেলিত নরনারী উৎসবের সাজে সেজে জমায়েত হন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
এইদিন সকালবেলা ঢাকার জাতীয় প্যারেড উদ্যানে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্য, কূটনীতিবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করে। চট্টগ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষে সাতদিন ব্যাপী ঐতিহাসিক বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন এই মেলা দেখতে আসেন। দেশের প্রতিটি জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। আনন্দ উৎসব থেকে বাদ পড়ে না গ্রামীন অঞ্চলের অবহেলিত মানুষসকল। তারাও বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন এবং অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে থাকে।
বিজয় দিবসের চেতনা :
আমাদের জাতীয় জীবনে এ দিনটির প্রধান তাৎপর্য হচ্ছে— এ দিনটি সমগ্র দেশবাসীর বহুকাল লালিত মুক্তি ও সংগ্রামের অঙ্গীকারে ভাস্বর। এই বিজয় দারিদ্র্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ। স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পর এখনো অসংখ্য লোক অশিক্ষিা ও দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়েছে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বেকারত্বের জালে আবদ্ধ যুবক বেছে নিচ্ছে নৈতিক অবক্ষয় ও সমাজবিরোধী পথ। এখনো আমরা আমাদের বিজয় দিবসকে তথা এক কথায় স্বাধীনতাকে (কারণ স্বাধীনতা এবং বিজয় একই সূত্রে গাঁথা যার একটি ছাড়া অপরটি অর্থহীন) সঠিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারি নি। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে সুখী – সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করা।
পরিস্থিতি উত্তরণের উপায় :
অজস্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয় যাতে কারো ব্যক্তিগত বা দলগত চোরাবালিতে পথ না হারায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বাধীনতা অর্জন করা কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। আজ বিশ্বের দিকে দিকে উৎকর্ষ সাধনের প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে আমাদেরও সৃষ্টি করতে হবে উন্নয়নের ধারা। দেশ গড়ার কাজে আজ প্রয়োজন সমগ্র জাতির নতুন করে শপথ গ্রহণ। সর্বপ্রকার স্বৈরতন্ত্র থেকে থেকে দেশকে মুক্ত করে আত্মশক্তিকে বলীয়ান হয়ে উঠতে হবে।তবেই গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
বিজয় দিবস বনাম অপশক্তি :
যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে আমাদের বিজয়ের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সেই স্বপ্ন নানা কারণেই গত চার দশকেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারে নি। স্বাধীনতার পর বার বার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী দেশি ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্বের হার, জনস্ফীতি, আইনশৃংখলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় বিজয় দিবসের মূল্য লক্ষ্য বা চেতনাকে বিপন্ন করে চলছে। স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কার্যকলাপ বার বার সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে এবং বাহিরে। প্রকৃত স্বাধীনতাকামী ও স্বাধীনপ্রিয় মানুষ তাদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার হতে বারবার বঞ্চিত হয়েছে। বিজয় দিবসের চেতনা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন স্বাধীনতার প্রকৃত গৌরবগাথা আর আত্মত্যাগের সত্যিকার ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
উপসংহার :
শ্রেয়বোধ ও শুভবুদ্ধিকে আশ্রয় করে আমরা প্রতিকূল ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। প্রতিটি বিজয় দিবসে মুক্তিযু্দ্ধের চেতনাকে মশাল করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে হতাশা ঠেলে, প্রত্যয়ে ও সাহসে বুক বেঁধে। পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রগতি ও পরিবর্তনের ধারায় অগ্রসর হতে পারলে আমাদের শ্রষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা আমাদের জীবনে অর্থবহ হয়ে উঠবে।