বাংলাদেশের জাতীয় সবজির নাম কি

বেগুন ছাড়াও, মুলা, শাক, পালং শাক, লালশাক, পটল, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, করলা, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি সবজিকেও বাংলাদেশের জাতীয় সবজি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এসব সবজি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর। ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত, বাংলাদেশের জাতীয় সবজির নাম নির্ধারিত হয়নি।
সবজির পরিচিতি ও গুরুত্ব
সবজির ধারণা দুটি গ্রীক শব্দ যথা : 'Oleris' অর্থ গুল্মজাতীয় গাছ এবং 'culture' অর্থ চাষাবাদ হতে সবজি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে ঝোপজাতীয় নরম ও রসালো গাছ যা বিশেষ যত্নসহকারে, সীমিত আকারে চাষ করা হয়। অনেক বিরুৎ বা তৃণলতা ও কিছু কিছু বৃক্ষজাতীয় গাছের বিভিন্ন অংশ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে গাছের বিভিন্ন অংশকে বিভিন্ন শ্রেণির সবজিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমনঃ
- পাতাজাতীয় সবজিঃ উদাহরণ- পুঁইশাক, লালশাক, ধনে পাতা, লেটুস, বাঁধাকপি, কচুশাক, সজিনা পাতা, কুমড়া ও লাউ পাতা শাক, থানকুনি, শুষনি শাক, পুদিনা, পালংশাক ইত্যাদি ।
- মূলজাতীয় সবজিঃ উদাহরণ- গাজর, মূলা, শালগম, বিট ইত্যাদি।
- টিউবার বা কন্দজাতীয় সবজিঃ উদাহরণ- গোল আলু, মেটে আলু, মুখি কচু, ওলকচু, মানকচু ইত্যাদি।
- ফলজাতীয় সবজিঃ উদাহরণ- পেঁপে, টমেটো, বেগুন, লাউ, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, করলা, কাঁকরোল, ঢেড়শ, পটল, বরবটি, শশা ইত্যাদি।
- কান্ড জাতীয় সবজি-উদাহরণঃ ডাটা শাক, কচি বাঁশ, পুঁই, ডাটা, কলা গাছের শাঁস ইত্যাদি।
- ফুল জাতীয় সবজিঃ উদাহরণ-ফুলকপি, ব্রকোলি, বকফুল, কুমড়া ফুল, কলার মোচা ইত্যাদি ।
- বীজজাতীয় সবজিঃ উদাহরণ- মটরশুটি, শিম, কাঁঠালের বীজ ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত শাকসবজি
বাংলাদেশে প্রায় ৬০ ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায় (সারণি-১)। কিন্তু সবগুলো চাষাবাদ করা যায় না। আদিকালে যখন মাঠে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন হয়নি, তখন মানুষ জঙ্গল হতে বিভিন্ন গাছের লতাপাতা, কাণ্ড, ফুল, মূল ইত্যাদি সবজি হিসেবে আহরণ করে জীবন ধারণ করতো।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ দৈহিক ও মেধা সম্পর্কিত বহুবিধ অসুখ বিসুখে ভূগছে। খাদ্যে ভিটামিন 'এ', 'বি', 'সি', লৌহ, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের অভাবেও মানুষ নানাবিধ রোগ আক্রান্ত হচ্ছে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এর মধ্যে শুধু ভিটামিন 'এ'র অভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব ধরনের সবজিতেই সব ধরনের কম বেশি ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বিদ্যমান, যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন ।আমার আশেপাশের সেরা রেস্টুরেন্ট
মানুষের শরীরের বহু ধরনের অসুস্থতা দূর হতে পারে অধিক পরিমাণ শাক-সবজি খাওয়ার মধ্য দিয়ে। কেননা পুষ্টিমান ও স্বাদে টাটকা শাক-সবজির জুড়ি নেই। শরীরের পুষ্টির সিংহভাগ আমরা এখান থেকেই পেয়ে থাকি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ঘোষণা দিয়েছে যে যত বেশি সবজি ও ফল খায়, ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তার ততই কম। এছাড়া এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে নিরামিষভোজীরা দীর্ঘজীবি হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে খনিজ পদার্থযুক্ত খাদ্যের প্রাপ্যতা অনেকটা কম। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদিতে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকলেও এগুলোর উচ্চমূল্যের কারণে দরিদ্রদের পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের জন্য ফল ও সবজির ওপর তাদেরকে নির্ভর করতে হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠির বৃহৎ অংশ এখান থেকেই পুষ্টি পেয়ে থাকে। এদেশে আবহাওয়া ঋতুভিত্তিক হলেও ঋতু বৈচিত্রের সাথে মিল রেখে হরেক রকমের শাক-সবজি উৎপন্ন হয়। অধিক পরিমাণে সবজি গ্রহণ খাদ্যকে সুষম করে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে খাদ্যের মোট ক্যালরির অন্তত ৫% ফল ও সবজি থেকে আসা উচিত। এতে যে পরিমাণ সবজি খেতে হবে, তা দেহের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদাও পূরণ করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক মাথাপিছু শাক-সবজির প্রাপ্যতা প্রায় ৭০ গ্রাম (আলুসহ) অথচ জাপানের লোকেরা প্রতিদিন গড়ে ৪২৫ গ্রাম সবজি খেয়ে থাকে। বাংলাদেশে অনেক পত্রবহুল সবজি ভিটামিন সমৃদ্ধ। আমাদের দৈনন্দিন চাহিদাকৃত কিলোক্যালরীর ২১২২-এর প্রায় ৭৫% যোগান পাই দানাদার খাদ্য হতে, আর বাকী ২৫% পাই ফলমূল, ডাল-তেল ও শাকসবজি হতে। সেজন্য প্রতিদিন আমাদের অন্তত ২০০ গ্রাম শাক-সবজি খাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা পাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যেহেতু উৎপাদন কম হয়। আমাদের ও এশিয়ার উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের খাদ্য গ্রহণের তুলনামূলক চিত্র দেখলে সহজে বুঝা যাবে যে আমাদের অবস্থান কত নিচে কারণ এ বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা, গবেষণা ও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সভ্যতার বিকাশ, মানুষের চাহিদা, রুচির পরিবর্তন, আবহাওয়ার বৈচিত্রতা, সবজি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পরিবহন ইত্যাদির ধরন ক্রমাগত পাল্টাচ্ছে। বিজ্ঞানের উন্নতি, প্রতিযোগিতা ও টেকসই প্রযুক্তির কারণে শাক-সবজি, ফলমূলের উৎপাদন মৌসুম, চাষের ধরন, একক জমিতে ফলন বৃদ্ধি, আকার, রং, পুষ্টির পরিমাণ ইত্যাদির উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে। এর ফলে অনেক পুরাতন শাক-সবজির চাষ কমে যাচ্ছে এবং নতুন ধরনের শাক সবজির প্রবর্তন হচ্ছে। যেমন: দেশি সবুজ বেগুন, কাটুয়া ডাটা, দেশি লাল মূলা, দেশি পেঁপে, বথুয়া ও কাটানটে শাক, দেশি কচুশাক ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে কমে যাচ্ছে। অপরদিকে গাজর, গিমা কলমী, গ্রীষ্মকালীন পিয়াজ ও বাঁধাকপি, হাইব্রিড করলা, লাউ ও শশা ইত্যাদির প্রবর্তন হচ্ছে।
খাদ্য হিসেবে সবজির গুরুত্ব
মানুষ সবজিকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করলেও খাদ্য হিসেবে এর গুরুত্ব সর্বাধিক, কারণ সবজিতে খাদ্যমান বেশি এবং সহজে আহরণ উপযোগী হয়। খাদ্য হিসেবে সবজির গুরুত্ব বেশি হওয়ার কারণগুলো হলো
(ক) খাদ্যমান- শাকসবজিতে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ বিদ্যমান।
(খ) প্রোটিনের উৎস হিসেবে শাক সবজি- সবজিতে প্রোটিনের পরিমাণ সাধারণত শতকরা ২ ভাগের মতো । কিন্তু শিমজাতীয় সবজিতে এর পরিমাণ বেশি। আমার আশেপাশের সেরা রেস্টুরেন্ট
(গ) পানি ও আঁশের উৎস হিসেবে শাক সবজি-বাঁশ, ঢেঁড়শ, মিষ্টিআলু শাকে আঁশ আছে এবং ফল ও পাতা জাতীয় সবজিতে প্রচুর পানি থাকে।
(ঘ) ক্যালোরির উৎস্য হিসেবে সবজি- দানা ফসলের তুলনায় একক জমিতে শ্বেতসার সমৃদ্ধ সবজি বেশি উৎপাদন সম্ভব। সবজির মধ্যে শিম, মটরশুটি, কাঠালের বীজ ইত্যাদি যথেষ্ট ক্যালরি সমৃদ্ধ ।
(ঙ) ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস পত্রবহুল সবজি- এ জাতীয় সবজি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ। মানুষের দেহের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ, শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তাই এজন্য একজন ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।