আদার উপকারিতা ও অপকারিতা

আদার উপকারিতা ও অপকারিতা
Admin January 26, 2025 140
আদা গাছটি জিঙ্গিবেরাসি পরিবারের অন্তর্গত হলুদের মত ঔষধীয় বিস্ময়ের পাশাপাশি। সারা বিশ্বের যে কোন রান্নাঘরে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মশলাগুলির মধ্যে একটি। আসলে, আদার মশলাদার এবং সতেজ স্বাদটি হল অনেক বিখ্যাত রান্নার প্রধান উপকরণ। কিন্তু এই মশলার জাদু শুধুমাত্র রান্নাঘরেই আবদ্ধ নয়।
হাজারো বছর ধরে আদা একটি নিরাময়কারী প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আয়ুর্বেদিক, ইউনানী এবং সিদ্ধা চিকিৎসায়। এটি সর্বোত্তম গাছড়াগুলির মধ্যে একটি যা বমি ভাব, বমি, গ্যাস, স্থুলতা কমাতে ব্যবহার করা হয়। আদা চা ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জনপ্রিয় পানীয় এটির শরীরের ওপর উষ্ণতা এবং উদ্দীপক প্রভাবের জন্য। শরৎ ঋতুতে আবির্ভূত হয়ে এটি জিঞ্জারব্রেড ক্যান্ডি এবং সজ্জা বড়দিনের স্বাদ এবং সজ্জার বেশিরভাগ জুড়ে থাকে।


আদার উপকারিতা

আদা হল এক ধরণের ঔষধীয় সুপারখাদ্য শরীরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপের জন্য। এই আয়ুর্বেদিক বিস্ময়টির সমস্ত স্বাস্থ্যগুণ এক হাতে গোনা মুশকিল।

এটি একটি অ্যান্টিমেটিক (বমিভাব এবং বমি থামায়) কাশি-বিরোধী (কাশি দমনকারী) প্রদাহ-বিরোধী, জীবাণু-বিরোধী এবং একটি দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। উপরন্তু, আদার হাইপোগ্লাইসেমিক (রক্তে শর্করাভাব কমায়) এবং হাইপোলিপিডেমিক (কোলেস্টেরল কমায়) প্রভাব হৃদয়ের স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী হিসেবে পাওয়া গেছে। বিস্তারিত কথায় না গিয়ে আদার কিছু প্রমাণ-ভিত্তিক স্বাস্থপকারিতার বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

বমিভাব কমায়ঃ বমিভাব এবং বমির সবচেয়ে ভাল নিরাময়গুলির মধ্যে একটি হল আদা। এটি শুধুমাত্র গর্ভাবস্থার সময় বমিভাব কমায় এবং গতির কারণে হওয়া অসুস্থতা কমায় তা নয়, এটি অস্ত্রোপচার পরবর্তী এবং কেমোথেরাপি প্রবর্তিত বমিভাবের বিরুদ্ধেও কার্যকর।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ প্রথাগতভাবে ওজন কমাতে কার্যকর আদা। এটি এখন বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত যে এই গাছড়াটি খিদে দমন করে, লিপিড পরিপাকে হস্তক্ষেপ করে, এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে ওজন কমানো উন্নীত করে তোলে।
কাশি এবং ঠাণ্ডা লাগার জন্যঃ আদা শরীরে পিত্ত বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগা কমে যায়। এটি জীবাণু-বিরোধী এবং সক্রিয় উপাদান দিয়ে মধ্যস্থতা করে যার ফলে কাশি কমতে দেখা গেছে।
হজম উন্নত করেঃ আদা পরিচিত হজম উন্নত করার জন্য এবং অন্ত্র থেকে খাবার শুষে নেওয়ার জন্য। এটি স্থুলতা এবং পাকস্থলীর গ্যাসও কমায়।
মহিলাদের জন্য উপকারিতাঃ মাসিকের সময় হওয়া সংকুচনের সবচেয়ে ভাল নিরাময়গুলির মধ্যে একটি হল আদা। গবেষণা প্রমাণ করে যে ঋতুস্রাবের আগের 3দিন এবং প্রথম 2দিন আদা খেলে মাসিকের ব্যথায় আরাম পাওয়া যাবে। ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহও কমায়।
রক্তচাপ কমায়ঃ আদা একটি হাইপোটেনসিভ (রক্তচাপ কমায়) হিসেবে ব্যবহৃত হয় আয়ুর্বেদিক ওষুধে। ধমনীতে এটি একটি আরামদায়ক প্রভাব দেয় বলেও জানা গেছে, যার ফলে রক্তচাপ কমে।
ডায়বিটিসের জন্য আদা
ডায়বিটিস মেলিটাস হল একটি হরমোনের ব্যাধি যেখানে শরীর সঠিকভাবে তার শর্করা পরিপাক করতে পারেনা। এটি প্রধানত হয় যখন একজন ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কম থাকে বা যখন এটি রক্তস্রোতের থেকে সঠিকভাবে গ্লুকোজ তুলে নিতে পারছে না। প্রায় সব ল্যাব-ভিত্তিক এবং ক্লিনিকাল গবেষণা দাবি করে অ্যান্টিডায়বেটিক হিসেবে আদার দক্ষতার কথা।
দুটি ভিন্ন ক্লিনিকাল পরীক্ষায়, ডায়বিটিসের রুগীদের 2 গ্রাম করে আদার পাউডার প্রতিদিন দেওয়া হয় 12 সপ্তাহ ধরে এবং প্রতিদিন প্রায় 2000 মিলিগ্রাম আদার সম্পূরক দেওয়া হয় 10 সপ্তাহ ধরে। নির্ধারিত সময়ের শেষে উভয় গবেষণাই এই উপসংহারে পৌঁছয় যে আদার ব্যবহার শরীরকে ইনসুলিন সংবেদনশীল করে তোলে এবং এর ফলে রক্তে শর্করাভাব কমতে থাকে।
সুতরাং এটা নিরাপদভাবে বলা যায় যে আদা ডায়বিটিস মেলিটাসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও, নিরাপত্তার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া সবসময়ই ভাল আদা স্বাস্থ্য সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করার আগে।

আদার অপকারিতা

আদা একটি প্রাকৃতিক উষ্ণায়নকারী গাছড়া, টাই অতিরিক্ত সেবন অম্বল, ডায়রিয়া বা অন্যান্য পাকস্থলী সম্পর্কিত সমস্যার রূপ নিতে পারে।
গবেষণা প্রস্তাবিত করে যে আদা রক্তচাপ কমায়। সুতরাং যাদের রক্তচাপ এমনিতেই কম বা যদি আপনি রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খাচ্ছেন, তাহলে আদা এড়িয়ে চলাই ভাল।
আপনি যদি অন্য কোন ধরণের ওষুধ খান, তাহলে যেকোনো আকারে আদা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভাল।
আদা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রাতঃকালীন অসুস্থতার লক্ষণগুলি দূর করে বলে দেখা গেছে তবে গর্ভাবস্থার সময় মাঝারি পরিমাণে আদা খাওাই ভাল।